আইসিস, ওসাইরিস, হোরাস, আমুন, রা, হাথোর, বাস্টেট, থথ, আনুবিস এবং তাহ নামগুলো চেনা চেনা লাগছে নিশ্চয়। হ্যাঁ এরা সবাই মিশরের দেবদেবী। এরকম প্রায় ২০০০ এর বেশি দেবদেবী প্রাচীন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
আর পাঁচটা সংস্কৃতিতে যা হয় সেটা মিশরেও ঘটেছিল। তথাকথিত বিখ্যাত দেব-দেবীরা রাষ্ট্রীয় দেবতায় পরিণত হন। বাকি বেশির ভাগ দেব-দেবীদের স্থান হয় কোনও একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে । বা কিছু ক্ষেত্রে, এদের খোঁজ মেলে বিশেষ আচার প্রথা পালনের ক্ষেত্রে। উদাহরণ স্বরূপ, ‘কেভেট’ নামক এক স্বল্প পরিচিতা দেবীর কথা জানা যায়, যিনি মৃত মানুষের আত্মাকে শীতল জল প্রদান করেন, যখন তারা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিচারের অপেক্ষা করে। আবার ‘সেশাত’ নামের এক দেবীর পরিচিতি লিখিত শব্দ এবং নির্দিষ্ট পরিমাপের দেবী রুপে। যিনি হারিয়ে গেছেন ‘থথ’ নামক অধিক পরিচিত দেবতার ছায়ায়। যাকে আমরা চিনি লেখক কবিদের পৃষ্ঠপোষক রূপে।
জীবন কাল থেকে শুরু করে মৃত্যু পরবর্তী জগতে, প্রতিটি মানুষের যে যাত্রা তাতে দেব-দেবীরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন সেটাই মূলত প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতিতে এই দেবতাদের অবস্থান বুঝতে সাহায্য করে। এর মাধ্যমেই তাদের চারিত্রিক বিস্তার ঘটেছে। ইতিহাসবিদ মার্গারেট বানসন লিখেছেন:
মিশরের অসংখ্য দেবতারাই ছিলেন দেশের সাংস্কৃতিক আচারপ্রথা এবং ব্যক্তিগত ধর্মীয় অনুশীলনের কেন্দ্রবিন্দু। মৃতদেহের সাথে আচার-অনুষ্ঠানে এবং মরণোত্তর শাশ্বত আনন্দ লাভের মিশরীয় বিশ্বাসে তারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
অ্যানিমিস্টিক বা বা এই জগতের সব কিছুই মানুষের জীবনের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে এই বিশ্বাস থেকে মিশরের দেব-দেবীদের বিকাশ ঘটে। যা ধীরে ধীরে অ্যান্থ্রোমরফিক বা নর রুপে দেব দেবীর অবস্থান ও জাদুবিদ্যার ভাবনায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। ‘হেকা’ ছিলেন মিশরীয় জাদু এবং ওষুধের দেবতা। কিন্তু তার সাথেই তাঁর পরিচিতি ছিল তিনি আদিম শক্তি রূপেও। অন্যান্য সমস্ত দেবতাদের আগে থেকে তার অস্তিত্বের প্রমান মেলে। যিনি সৃষ্টির কাজকে বাস্তবায়িত করেছিলেন, সাথেই নশ্বর ও ঐশ্বরিক উভয় জীবনকে টিকিয়ে রেখেছিলেন। মিশরীয় সংস্কৃতির মূল ভিত্তি ছিল ‘মা’ত’ - সম্প্রীতি এবং ভারসাম্য। এই একই নামের দেবীর অস্তিত্ব দেখতে পাওয়া যায়। সাদা অস্ট্রিচ পাখির পালক তার প্রতিভূ। সংস্কৃতিকাব্য অনুসারে ‘হেকা’ ‘মা'ত’কে ক্ষমতা দিয়েছিলেন। ঠিক যেভাবে উনি অন্য সমস্ত দেবতাদেরকেও ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। হেকা শব্দের অর্থই জাদু। হেকা তারই মূর্তমান রুপ। যাকে প্রকৃতপক্ষে প্রাকৃতিক নিয়ম হিসাবেই ধরে নেওয়া বোঝা উচিত। যা আজকের সময়ের ভাবনা অনুসারে অতিপ্রাকৃত বলে বিবেচিত হবে। কিন্তু, মিশরীয়দের কাছে, হেকা বিষয়ক ভাবনাই ছিল একমাত্র উত্তর - বিশ্ব এবং মহাবিশ্ব কিভাবে কাজ করে, এই প্রশ্নের । দেবতারা মানুষকে নানান ধরনের ভালো ভালো বিষয় উপহার দিয়েছেন। যা আসলে তাদের করার সুযোগ দিয়েছেন হেকা।
এই দেব-দেবীদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম, স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব এবং বৈশিষ্ট্য ছিল। তারা বিভিন্ন ধরণের পোশাক পরতেন। বিভিন্ন বস্তুকে পবিত্র রূপে ধারণ করতেন। নিজ নিজ কাজের ক্ষেত্রে নিজস্ব প্রভাবের চুড়ান্ত প্রয়োগ করতেন। এর সাথেই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব অনুসারে যে কোনও ঘটনায় নিজস্ব পদ্ধতিতে প্রতিক্রিয়া দেখাতেন। প্রতিটি দেবতার নিজস্ব দক্ষতার ক্ষেত্র ছিল। যা প্রায়শই ওতপ্রোতভাবে মিশে থাকত মানব জীবনের বিভিন্ন দিকের সাথে ।
উদাহরণস্বরূপ, ‘হাথোর’ ছিলেন সঙ্গীত, নৃত্য এবং নেশায় মাতাল হওয়ার বিষয় দেখাশোনা করার দেবী। কিন্তু তিনি যে একজন প্রাচীন দেবী মাতা ছিলেন সেটা বুঝতে অসুবিধা হয় না। নীল নদের ঐশ্বরিক প্রতিরুপ হিসেবে মিল্কিওয়ে বা আকাশগঙ্গার সাথেও তার সংযোগ ছিল বলে বিশ্বাস করা হত। আবার ইনিই তার আগের অবতারে ছিলেন ‘শেখমেট’ । একজন ধ্বংসের দেবী। ‘নেথ’কে মূলত একজন যুদ্ধদেবী রূপেই প্রাথমিকভাবে পাওয়া যায়। যিনি পরে একজন লালনপালনকারী ব্যক্তিত্বসম্পন্না মাতৃরূপ দেবীতে পরিণত হন। যার কাছে দেবতারা তাদের বিরোধ নিষ্পত্তি করতে যেতেন। এরকম অনেক দেব-দেবী, যেমন ‘সেট’ বা ‘সার্কেট’, সময়ের সাথে সাথে বদলে গেছেন। রূপান্তরিত হয়েছেন অন্যান্য ভূমিকা ও দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ।
এই রূপান্তরগুলো কখনও কখনও অত্যন্ত নাটকীয় রূপ নিয়ে ছিল। যেমন ‘সেট’ - যিনি একজন নায়ক-রক্ষক-দেবতা থেকে একজন খলনায়ক এবং বিশ্বের প্রথম খুনীতে পরিণত হয়েছিলেন। ‘সার্কেট’ প্রায় নিশ্চিতভাবেই একজন আদি মাতৃদেবী ছিলেন এবং পরবর্তীতে বিষাক্ত প্রাণীদের (বিশেষত কাঁকড়াবিছে) আক্রমণ থেকে রক্ষার দায়িত্ব নেন। নারী ও শিশুদের অভিভাবক হিসেবে তার ভূমিকা সেইসব বৈশিষ্ট্যগুলিকেই প্রতিফলিত করে। বানসন লিখেছেন:
অনেক অনেক দেবতা নিয়ে মিশরীয়দের কোন সমস্যা ছিল না। কদাচিৎ তারা পুরানো দেবতাদের দূরে ঠেলে দিয়ে নতুনের ছত্রচ্ছায়ায় আশ্রয় নিত। বিভিন্ন দেব-দেবীর বৈশিষ্ট্য এবং তাদের ভূমিকা, বিভিন্ন ধর্মীয় বিশ্বাস, রীতিনীতি বা আদর্শকে এক মহান সমন্বয় সাধনের ভাবনা নিয়ে সে সময়ে একত্রিত করা হয়েছিল। রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় কারণেও দেব-দেবীদের একত্রিকরণ ঘটেছিল। উদাহরণস্বরূপ, থিবসের দেবতা ‘আমুন’, যিনি নতুন সাম্রাজ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী দেবতা হিসাবে বিবেচিত হতেন, সূর্যদেব ‘রা’-এর [এর ধর্ম মিশরে সূচনায় অত্যন্ত প্রভাবশালী ছিল] সাথে একত্রিত হয়েছিলেন। মিশরের দেবতাদের উপাসনা সময়ের সাথে সাথে আগে স্থানীয় স্তরে বিকশিত হয়েছিল এবং তারপরে জাতীয় স্তরে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে বৃহৎ রাজনৈতিক বা ধার্মিক সম্প্রদায়ের সাথে মিশে যায়।
সামান্য এই ভুমিকা শেষে প্রাচীন মিশরের দেব-দেবীদের যে তালিকাটি নির্মান করা হয়েছে তা অনেক গবেষকের করা অসংখ্য কাজের ভিত্তিতে সাজানো হয়েছে। সেই সব গ্রন্থর নাম এই লেখার শেষে দেওয়া হল। সর্বাধিক দেব-দেবীকেই এই তালিকায় রাখার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র আঞ্চলিক দেব-দেবীদের এই তালিকা থেকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ দুটি, এক, তাদের ভূমিকা অনিশ্চিত বলে মনে হয়েছে এবং দুই, তারা প্রধান দেবতায় রূপান্তরিত হয়েছেন। যখন কোনও এক প্রধান দেবতা পূর্ববর্তী গৌণ দেবতা থেকে বিবর্তিত হয়েছেন, তার উল্লেখ অবশ্য করা হয়েছে।
এরসাথেই কিছু ‘দ্য ফিল্ড অফ রিডস’ বা ‘লিলি লেক’-এর মতো ধারণাগুলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে সমস্ত স্থান বা বিষয়গুলি দেবতাদের সাথে সম্পর্কিত এবং জীবন পরবর্তী জগতের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। ঈশ্বর বা দেবতাদের নানান বৈশিষ্টর সংজ্ঞা এবং তারা যে ভূমিকা পালন করেছিলেন তা স্পষ্ট ভাবেই এই তালিকায় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। সাথেই এটাও উল্লেখ করা উচিত যে, তালিকাভুক্ত প্রতিটি দেব-দেবী মিশরের দীর্ঘ ইতিহাস জুড়ে একইভাবে নিজেদের কাজ কর্মের পদ্ধতি বজায় রাখেননি। উদাহরণস্বরূপ, ওসাইরিস, সম্ভবত মিশরের প্রাক-সাম্রাজ্য সময়কালে (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) একজন উর্বরতার দেবতা হিসাবেই পরিচিত ছিলেন। কিন্তু তিনিই আবার সুচনা লগ্নের রাজবংশের সময়কালে ( আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) প্রথম রাজা হিসাবে পরিচিতি পেয়েছেন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয়ও ছিলেন। নতুন সাম্রাজ্যের সময়কালে (১৫৭০-১০৬৯ খ্রিস্টপূর্ব) আমুনকে দেবতাদের রাজা হিসাবে বিবেচনা করা হত। এই সমস্ত বিষয়গুলিকে চেষ্টা করা হয়েছে এই তালিকায় ছুঁয়ে যাওয়ার। তবে মূল নজর রাখা হয়েছে দেব-দেবীদের ভূমিকা কী কারণে জনপ্রিয় ছিল সেইদিকে।
Index
A B C D E F G H I J K L M N O P Q R S T U W Y Z
A
আ’হ [A'ah] - প্রাচীনকালের চাঁদের দেবতা। যিনি পরে ইয়াহ ( ইংরেজিতে YAH ) এবং তারও পরে খোনসু নামে পরিচিত হন।
আকেন [Aken] - লিলি লেক পেরিয়ে আত্মাকে পরবর্তী জীবনে নল খাগড়ার জগতে নিয়ে যায় যে নৌকা, এ সেই নৌকার রক্ষক। যতক্ষণ না হ্রাফ-হেফ নামক বিরসবদন কর্কশ কন্ঠের অধিকারি স্বর্গ-স্থিত নৌকাচালকের তাকে প্রয়োজন হয় এই চরিত্র ঘুমিয়েই থাকে। এর নাম শুধুমাত্র ‘বুক অফ ডেড’ উল্লেখিত আছে।
আকের [Aker] - পরকালে পূর্ব ও পশ্চিম দিগন্তের অভিভাবক। সন্ধ্যায় রা-এর সূর্য বজরা পাতাল জগতে প্রবেশ করে এবং ভোরে সেই স্থান ছেড়ে চলে যায়। এই চরিত্র ওই সময়ে বজরাটিকে রক্ষণাবেক্ষণ করে।
আম-হেহ [Am-Heh] - পাতালের দেবতা। "লক্ষ লক্ষ প্রাণ গ্রাসকারী" এবং "অনন্তকালের ভক্ষক", বাস করেন আগুনের হ্রদে।
আমেনেত/আমেন্তেত [Amenet (Amentet) ] - আন্ডারওয়ার্ল্ড বা পাতালের দরজার কাছে একটা গাছে বসবাস করেন এই দেবী। যিনি মৃতদেরকে খাদ্য ও পানীয় দিয়ে পরকালে স্বাগত জানান। হ্যাথর এবং হোরাসের কন্যা “পশ্চিমের নারী" নামেও পরিচিত। ইনিই স্বর্গের নৌকাচালকের স্ত্রী।
আম্মিত (আম্মুত) [Ammit (Ammut)] - "আত্মা গ্রাসকারী", কুমিরের মাথা, চিতাবাঘের দেহ এবং পেছন থেকে জলহস্তীর মত দেখতে এই দেবী। যিনি পরকালে সত্যের হল অফ ট্রুথের ন্যায়বিচারের দাঁড়িপাল্লার নীচে বসে থাকেন। সেই সমস্ত আত্মাদের হৃদয় গ্রাস করেন যারা ওসাইরিসের বিচারে যোগ্য বলে বিবেচিত হয় না।।
আমুন (আমুন-রা) [Amun (Amun-Ra)] - সূর্য এবং বায়ুর ঈশ্বর। প্রাচীন মিশরের অন্যতম শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় দেবতা। থিবস নগরের পৃষ্ঠপোষক, যেখানে তিনি থিবান ট্রায়াড বা থিবসের তিন মহাশক্তি আমুন, মাত এবং খনসুর একটি অংশ হিসাবে পূজিত হন। কিছু সময়কালে ইনি দেবতাদের সর্বোচ্চ রুপে ভুষিত হলেও, মূলত উর্বরতা বিষয়ক এক গৌণ দেবতা। নতুন সাম্রাজ্য নির্মাণকালে তাকে মিশরে সবচেয়ে শক্তিশালী ঈশ্বর বলে মনে করা হত। সেই সময় তার উপাসনা একেশ্বরবাদের সমান পর্যায়ের ছিল। অন্যান্য দেবতাদের ওই সময়ে আমুনের নিছক সহচর হিসাবে বিবেচনা করা হত। তার গৌরব উজ্জ্বল সময়ে আমুন পুরোহিত তন্ত্র ছিল মিশরে সবচেয়ে শক্তিশালী। ‘আমুনের ঐশ্বরিক স্ত্রী’ নামক একটি বিশেষ পদ ছিল নারীদের জন্য। যা রাজকীয় মহিলাদের দেওয়া হত। যাদের ক্ষমতা ছিল প্রায় ফারাওয়ের সমান।
আমুনহোটেপ (আমেনহোটেপ), হাপুর পুত্র [Amunhotep (Amenhotep), Son of Hapu] - নিরাময় এবং জ্ঞানের ঈশ্বর। হার্দেদেফ এবং ইমহোটেপের সাথে এই মানুষটিকেও মিশরীয়রা দেবতা জ্ঞানে উপাসনা করতেন। একই সাথে ইনি ৩য় আমুনহোটেপের (১৬৮৬-১৩৫৩ খ্রিষ্টপূর্ব) রাজকীয় স্থপতিকার ছিলেন। তাকে এতটাই জ্ঞানী মনে করা হতো যে, মৃত্যুর পর তিনি দেবতায় পরিণত হন। পশ্চিম থিবসে তার একটি প্রধান মন্দির এবং দেইর এল-বাহরিতে একটি নিরাময় কেন্দ্র ছিল।
আমুনেট [Amunet] - আমুনের মহিলা প্রতিরূপ। ‘ওগডোড’* সদস্যা।
আনাত [Anat] - উর্বরতা, যৌনতা, প্রেম এবং যুদ্ধের দেবী। উৎস মূলত সিরিয়া বা কান্নান। কিছু গ্রন্থে তাকে ঈশ্বরদের মা হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার কিছু গ্রন্থে ইনি একজন কুমারী। আবার কিছু পুস্তকে সংবেদনশীল এবং কামুক, সাথেই সবচেয়ে সুন্দর দেবী হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ‘দ্য কনটেন্ডিংস অফ হোরাস অ্যান্ড সেট’ এর একটি সংস্করণ অনুসারে, একে দেবী নিথের পরামর্শে সেটের সহচরী/ সহধর্মিণী হিসাবে পেশ করা হয়েছে। গ্রীসের আফ্রোডাইট, ফিনিশিয়ার আসতারতে, মেসোপটেমিয়ার ইনানা এবং হিট্টিদের সাউস্কার সাথে সমতুল বলে অনেক গবেষক মত প্রকাশ করেছেন।
আন্তা [Anta] - আমুনের সহধর্মিণী হিসাবে তানিসে পূজিতা দেবী মাতের একটি রূপ।
অ্যান্ডজেটি/আন্ডিয়েটি [Andjety] - বুসাইরিস (অ্যান্ডজেট/অ্যান্ডিয়েটি) শহরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত উর্বরতার আদি দেবতা। নামের অর্থ "তিনি যিনি অ্যান্ডজেট/অ্যান্ডিয়েট থেকে এসেছেন"। ড-জেড নাম স্থিতিশীলতার প্রতীকের সাথে যুক্ত। অন্তিম সময়ে ইনি ওসাইরিসের শক্তির টানে তার ভিতর মিশে যান এবং তার নাম ওই দেবতার সাথে যুক্ত হয়ে যায়।
আনহুর (হান-হার) [Anhur (Han-her)] –যুদ্ধের ঈশ্বর এবং মিশরীয় সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক। গ্রীসের সভ্যতায় এর পরিচিত ওনুরিস নামে ।
অ্যাঙ্কেত (অনুকিত বা অনুকেত) [Anqet (Anukit or Anuket)] - উর্বরতার দেবী। তার সাথেই খারতুম আর আসোয়ানের ভিতর যে সংকীর্ণ নীলনদ অঞ্চল তারও দেখভালের মালকিন।
আন্টি [Anti] - উচ্চ মিশরের বাজপাখি রূপী দেবতা। কখনও কখনও একে আনাতের সাথে সম্পর্ক যুক্ত বলেও মনে করা হয়।
আনুবিস [Anubis] - মৃতদের ঈশ্বর। এর সাথে নানান বস্তু আদি সহযোগে মৃতদেহ সংরক্ষণের বিশেষ সম্পর্ক আছে। নেফথিস এবং ওসাইরিসের পুত্র, কেভেটের পিতা। আনুবিসের রুপ হিসাবে একটি কুকুর বা শেয়ালের মাথাধারী মানুষকে দেখানো হয়েছে। যার হাতে সব সময় একটা লাঠি থাকে। ইনি মৃতদের আত্মাকে ‘হল অফ ট্রুথ’ বা সত্যের বিচার কক্ষের পথে নিয়ে যান। তারসাথেই পরবর্তী জীবনে সেই আত্মা কী অবস্থান হবে সে বিষয়ে এক বিশেষ অনুষ্ঠানে, মৃতর হৃদয় ওজন করা, অংশ নেন। ওসাইরিসকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে ইনিই সম্ভবত মৃতদের আসল ঈশ্বর ছিলেন। সেই সময়েই তাকে ওসাইরিসের পুত্র রূপে উপস্থাপিত করা হয়েছিল।
আনুকে [Anuke] - মূলত একজন যুদ্ধ দেবী এবং মিশরের প্রাচীনতম উপাস্যদের একজ। কখনও কখনও ইনি যুদ্ধের দেবতা আনহুরের সহধর্মিণী। কিছু কিছু ক্ষেত্রে একে নেফথিস এবং আইসিসের সাথে সংযুক্ত করাও হয়েছে। কিছু গ্রন্থে আনুকে এদের ছোট বোন হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রারম্ভিক যুগের ছবিতে একে ধনুক এবং তীর সহ যুদ্ধের পোশাকে দেখা যায়। পরবর্তী সময়ে মাতৃরূপী দেবী এবং লালন-পালনকারী ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হয়েছিলেন। গ্রীকরা তাকে দেবী হেস্টিয়া* রূপে রুপান্তরিত করেছিল ।
এপডেমাক [Apedemak] – এক যুদ্ধ দেবতা যার রূপ সিংহ। এই দেবতার উৎস নুবিয়া বলে মনে করা হয়।
অ্যাপেপ (অ্যাপোফিস) [Apep (Apophis)] - অ্যাপেপ, আকাশিক মহাসর্প যে, প্রতি রাতে ভোরের উদ্দেশে পাতালের পথ ধরে এগিয়ে চলা রা-এর সূর্য বজরাকে আক্রমণ করে। ঈশ্বর এবং ন্যায্য বা বৈধ রূপে মৃতরাই মহাসর্পকে এই কাজ করা থেকে আটকাতে রা-কে সাহায্য করে। দিনের আগমন নিশ্চিত করতে, দেবতা এবং বিদেহী আত্মাদের দ্বারা বজরাটিকে রক্ষা করার এই ভাবনার সূত্র ধরে, সূর্য দেবতার মন্দিরে একটি আচার পালন করা হয়। অনুষ্ঠানটি ‘অ্যাপোফিস ওভারথ্রোয়িং’ বা ‘অ্যাপফিসের উৎখাত’ নামে পরিচিত।
অ্যাপিস [Apis]- দেবতা টাহ এর একটি অবতার হিসাবে মেমফিসে এই ঐশ্বরিক ষাঁড়ের পূজা করা হত। নারমার প্যালেটে* (আনুঃ ৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) চিত্রিত প্রাচীন মিশরের প্রাচীনতম দেবতাদের একজন। মিশরীয় সংস্কৃতির ইতিহাসে অ্যাপিস কাল্ট ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকা আচারপ্রথা।
অ্যারেন্সনুফিস [Arensnuphis] - দেবী আইসিসের সঙ্গী । সূচনা লগ্নে ফিলাতে তার জন্য চিহ্নিত পবিত্র স্থানে উপাসনা করা হত। সিংহ কিংবা মানুষরূপী এই দেবতার মাথায় পালকের মুকুট, এভাবেই চিত্রিত করা হয়েছে। উৎস নুবিয়া।
অ্যাসক্লেপিয়াস (এসকুলাপিয়াস) [Asclepius (Aesculapius)]- গ্রীকদের নিরাময়ের এই দেবতা মিশরের সাক্কারাতে উপাসনা করা হত। দেবত্ব আরোপ করা ইমহোটেপের রূপে একে পেশ করা হয়। তার প্রতীক, সম্ভবত দেবতা হেকার থেকে নেওয়া। লাঠির সাথে জড়িয়ে থাকা একটা সাপ। যে চিহ্ন আধুনিক সময়ে নিরাময় এবং চিকিৎসা পেশার সাথে যুক্ত। যাকে আমরা ‘রড অফ অ্যাসক্লেপিয়াস’ নামে চিনি।
অ্যাশ (অ্যাজ) [Ash (As)] - লিবিয়ার মরুভূমির দেবতা। একজন দয়ালু দেবতা, যিনি ভ্রমণকারীদের জন্য মরূদ্যান প্রদান করেছিলেন।
অ্যাসতাতি/অ্যাসতারতে [Astarte] - উর্বরতা এবং যৌনতার ফিনিশিয়ান দেবী। যাকে গ্রীকদের আফ্রোডাইট, মেসোপটেমিয়ার ইনানা/ইশতার এবং হিট্টাইটদের সাউস্কার সাথে সমতুল রূপে দেখা হয়। স্বর্গের রানী হিসাবেও একে উল্লেখ করা হয়। মিশরীয় পৌরাণিক কাহিনিতে, দেবী নিথ দ্বারা তাকে আনাতের সাথে সেটের স্ত্রী হিসাবে মনোনীত করা হয়।
আটেন [Aten] – সূর্যের গোলক আকৃতি রূপ চাকতি বা ‘ডিস্ক’। মূলত একজন সূর্য দেবতা যাকে ফারাও আখেনাতেন (১৩৫৩-১৩৩৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) মহাবিশ্বের স্রষ্টারূপী একমাত্র ঈশ্বরের পদে স্থাপন করেছিলেন।
আটুম (রা) [Atum (Ra)] - সূর্য দেবতা, দেবতাদের সর্বোচ্চ প্রভু, এননিডে (নয়টি দেবতার ট্রাইব্যুনাল) র প্রথম দেবতা (নয়টি দেবতার ‘ট্রাইব্যুনাল’ বা বিচারসভা), মহাবিশ্বের স্রষ্টা এবং একজন মানুষ। আতুম (রা) হলেন প্রথম ঐশ্বরিক সত্তা যিনি বিশ্ব সৃষ্টির সূচনা লগ্নের সেই আদি বিশৃঙ্খলার সময় আদিম ঢিপির উপর অবস্থান করেছিলেন। হেকার জাদুকরী শক্তি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে পৃথিবীর অন্যান্য সমস্ত দেবতা, মানুষ এবং জীবন সৃষ্টি করার জন্য উদ্বুদ্ধ হন।
আউফ (ইফু-রা) [Auf (Efu-Ra)] - আতুম (রা) এর আর একটি রূপ।
B
বা’আল/বাল [Ba'al] – ফিনিশিয়া উৎস জাত ঝড়ের দেবতা। নামের অর্থ "প্রভু"। এবং তিনি কান্নানের একজন প্রধান দেবতা ছিলেন। শুধুমাত্র নতুন সাম্রাজ্য সুচনার পরবর্তী সময়ের (১৫৭০-১০৬৯ খ্রিষ্টপূর্ব ) মিশরে এর উপাসনার সুত্র পাওয়া যায়।
বা’আলাত গেবাল [Ba'alat Gebal] - বাইব্লস শহরের ফিনিশিয়ান দেবী। একজন রক্ষক দেবী। বাইব্লস থেকে আসত প্যাপিরাস। তার সাথেই এই দেবীর যোগসূত্রের মাধ্যমে মিশরে এর উপাসনার সূত্রপাত হয়।
বাবি (বাবা) [Babi (Baba)] - ইনি পুরুষত্বের দেবতা। যাকে বেবুন হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল। যা পুরুষ যৌনতার প্রতীক।
বানেবডডিয়েডেট [Banebdjedet] - উর্বরতা / পুরুষত্বর দেবতা। যিনি মেষ বা মেষের মাথাওয়ালা একজন পুরুষ হিসাবে আবির্ভূত হন। মেন্ডেস নগরের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। ওসাইরিসের আরেকটা নাম হিসাবেও পাওয়া যায়।
বা-পেফ [Ba-Pef] - সন্ত্রাসের ঈশ্বর, বিশেষ করে আধ্যাত্মিক সন্ত্রাস। নামের আক্ষরিক অর্থ "সেই আত্মা"। মৃত্যু পরবর্তী জগতে এই দেবতা ‘হাউস অফ উয়’ বা দুর্ভাগ্যের আবাসস্থল নামক ভবনে বাস করেন। মিশরের রাজাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য ইনি বিশেষভাবে পরিচিত ছিলেন। তার উপাসনার জন্য কখনও মন্দির নির্মাণ করা হয়নি। কিন্তু এই দেবতাকে সন্তুষ্ট করতে এবং রাজাকে রক্ষা করার জন্য বা-পেফের উপাসনাকারী একটি সম্প্রদায় বিদ্যমান ছিল।
বাস্টেট (বাস্ট) [Bastet (Bast)] - বিড়ালদের দেবী। সুন্দরী। এর সাথেই ইনি নারীদের নানান গোপনীয়তা, প্রসব, উর্বরতা, উনানের আগুন এবং মন্দ বা দুর্ভাগ্য বাসস্থানের রক্ষাকত্রী। রা-এর কন্যা এবং হাথোরের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। বাস্টেট ছিলেন প্রাচীন মিশরের অন্যতম জনপ্রিয় দেবতা। পুরুষ এবং নারীরা তাকে সমমাত্রায় শ্রদ্ধা করত এবং তার ধারিক তাবিজ/কবচ শ্রীরে ধারণ করত। সর্বজনীন স্তরেও এই দেবী এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন ছিলেন যে, ৫২৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, পার্সিয়ানরা পেলুসিয়ামের যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য বাস্টেটের প্রতি মিশরীয়দের ভক্তিকে অন্যতম অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করেছিল। নিজেদের ঢালে বাস্টেটের ছবি এঁকেছিল পার্সিয়ানরা এবং তাদের সেনাবাহিনীর সামনে নানান জীবজন্তুকে এগিয়ে দিয়েছিল। কারণ তারা ভালোভাবেই বুঝে গিয়েছিল যে, মিশরীয়রা পবিত্র জীবদের আঘাত করে তাদের দেবীকে অসন্তুষ্ট করার চেয়ে আত্মসমর্পণ করার পথটাই বেছে নেব। এই দেবীকে একটি বিড়াল বা বিড়ালের মাথাওয়ালা একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে এর প্রধান উপাসনা স্থল ছিল বুবাস্টিসে।
বাট/বাত [Bat] - উর্বরতা এবং সাফল্যের সাথে যুক্ত এক আদি গাভীরূপী দেবী। প্রাচীনতম মিশরীয় দেবীদের মধ্যে একজন, যার উপাসনা প্রাক-সাম্রাজ্য যুগে (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব)ও হত। বাটকে চিত্রিত করা হয়েছে একটি গরু বা গরুর কান এবং শিংযুক্ত মহিলা হিসাবে। সম্ভবত এটাই নারমার প্যালেটের (আনুঃ ৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) উপরের দিকে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এই দেবীর আশীর্বাদ রাজার সাফল্যের সাথে যুক্ত ছিল। অতীত এবং ভবিষ্যত উভয়ই দেখার ক্ষমতার কারণে তিনি মানুষকে সাফল্যের আশীর্বাদ দিতে সক্ষম ছিলেন। পরবর্তী কালে, এই দেবীর গুনাগুণ হাথোরের সাথে সংবদ্ধ হয়। বা বলা যায় তার বৈশিষ্ট্যগুলি হাথোর গ্রহণ করেছিলেন।
বেন্নু [Bennu] – এক পক্ষী দেবতা যার পরিচিতি বেন্নু পাখি নামে বেশি ছিল। সৃষ্টি তত্বের ঐশ্বরিক পাখি। গ্রীক ফিনিক্স পাখির অনুপ্রেরণা। বেন্নু পাখির সাথে আটুম, রা এবং ওসাইরিসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। সৃষ্টির ভোরে বা সূচনার প্রাথমিক মুহূর্তে আটুম (রা) এর একটি রূপ হিসাবে এর উপস্থিতি ছিল। পাখিরূপী এই দেবতা আদিম জলরাশির উপর উড়তে থাকা অবস্থায় আর্ত চিৎকারের/নাদের মাধ্যমে দিয়ে সৃষ্টিকে জাগিয়েছিল। পরবর্তীতে, এই দেবতাই নির্ধারণ করেন যে সৃষ্টিতে কী অন্তর্ভুক্ত করা হবে আর কী হবে না। পুনর্জন্মের এক কল্প কাহিনী মাধ্যমে এই দেবতাকে ওসাইরিসের সাথেও সম্পর্ক যুক্ত বলে ধরা যায়। কারণ কাহিনি অনুসারে, পাখিটি সূর্যের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত ছিল। সেই সূর্য যা প্রতি রাতে মারা যায় এবং পরের দিন সকালে আবার নতুন জীবন পায় ওঠে।
বেস (আহা বা বিসু)[ Bes (Aha or Bisu)] - সন্তানের জন্ম, উর্বরতা, যৌনতা, হাস্যরস এবং যুদ্ধের দেবতা। বামন দেবতা হিসাবেও পরিচিত। মিশরীয় ইতিহাসের সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতাদের মধ্যে একজন যিনি নারী ও শিশুদের মন্দ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন এবং ঐশ্বরিক আদেশ ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করেছিলেন। তাকে প্রায়শই একজন দেবতার চেয়ে একজন ‘স্পিরিট’ বা বিশেষ সত্তা রূপে স্বীকৃতি দেওয়া হয় (এক 'দানব', যদিও এই শব্দের যে আধুনিক ধারণা আমরা যাপন করি তা মোটেও নয়) বা উপস্থাপিত করা হয়। সে যাই হোক তাকে দেবতা হিসাবেই উপাসনা করা হত। শুধু তাই নয় মিশরীয়রদের বাড়িতে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি দৈনন্দিন জিনিসপত্রে, যেমন আসবাবপত্র, আয়না এবং ছুরির হাতল তার রুপাবয়ব দেখতে পাওয়া যেত। তার সহধর্মিণী তাওয়ারেট। যিনি প্রসব এবং উর্বরতার জলহস্তী রূপিণী দেবী। বেসকে বড়মাপের কান, বিশিষ্ট যৌনাঙ্গধারী, ধনুকের মত বাঁকা পাওয়ালা এবং লঘুচিত্তের এক দাড়িওয়ালা বামন হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। তাকে সর্বদাই সামনের দিকে তাকিয়ে থাকা চরিত্র রূপে দেখানো হয়। কারণ উনি সব সময় নিজ দায়িত্ব বিষয়ে নজরদারি করার জন্য সতর্ক থাকেন।
বেসেট[ Beset] - আনুষ্ঠানিক জাদুতে আহ্বান করা দেবী। বেসের নারী সত্তা। প্রতিরক্ষামূলক দেবতা হিসাবে, বেসের দায়িত্ব ছিল অন্ধকারের জাদু, ভূত, আত্মা এবং দানবদের প্রতিরোধ করা। তার নারীসূচক এই রুপকে এইসব তমসাচ্ছন্ন শক্তিদের মোকাবিলা করার জন্য আহ্বান করা হত।
বুচিস [Buchis]- মন্টু দেবতার কা (জীবন শক্তি/অ্যাস্ট্রাল সেলফ) এর রূপায়ণ। দিক। জীবন্ত তথা ছুটে চলা ষাঁড় হিসেবে একে দেখানো হয়েছে।
C
গুহা দেবতা [Cavern Deities ] - নামহীন দেবতাদের একটি দল, যারা পাতালের গুহা জগতে বসবাস করত এবং দুষ্টদের শাস্তি দিত। তারসাথেই বৈধ বা ন্যায্য ভাবে মৃতদের আত্মাকে সাহায্য করত। মিশরীয় ‘বুক অফ দ্য ডেড’-এর ১৬৮তম মন্ত্র অনুসারে, এরা সাপ বা সাপের মত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই মন্ত্রটি 'স্পেল অফ দ্য টুয়েলভ কেভস' নামে পরিচিত এবং এই দেবতাদের উদ্দেশে কী ভেট দিতে হবে তার কথাও জানায়। একাধিক গুহায় মিশরের লোকেরা এই দেবতাদের জন্য নৈবেদ্য বাটিতে করে রেখে আসত।
ঐশ্বরিক নৌকাচালক (হ্রাফ-হাফ/হেফ) [Celestial Ferryman (Hraf-haf)] - "সেই জন যিনি তাঁর পিছনের দিকেও নজর রাখেন", একজন বিষণ্ণবদন নৌকাচালক, যিনি ন্যায্য রীতিতে মৃতদের আত্মাকে লিলি লেকের অপর পারে শরকাঠির ভুমি স্বর্গের তীরে নিয়ে যান। হ্রাফ-হাফের আচার ব্যবহার অত্যন্ত অভদ্র এবং অপ্রীতিকর। মৃতর আত্মাকে স্বর্গ পৌঁছানোর জন্য সেই আচরণের প্রতিক্রিয়ায় বিনয়ীভাব বজায় রাখার দিকে নজর রাখতে হয়। হ্রাফ-হাফকে নৌকায় থাকা একজন মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে যার মাথা তার পিছনের দিকে ঘুরে থাকে।
D
ডেডান [Dedun] – সম্পদ বিষয়ক একজন রক্ষক দেবতা, বিশেষ করে নুবিয়া থেকে আসা পণ্যসামগ্রীর। উৎস অনুসারে একজন নুবিয়ান দেবতা।
ডেনওয়েন [Denwen] - ড্রাগনের আকৃতির একজন সর্প দেবতা। যার চারপাশে আগুনের ঘেরাটোপ থাকে। আগুন নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা ধারী এবং দেবতাদের ধ্বংস করার প্রেক্ষিতে যথেষ্ট শক্তিশালী। পিরামিডের গাত্র থেকে প্রাপ্ত লেখা অনুসারে, ইনি নিজ আগুনের নিঃশ্বাস প্রয়োগ করে সমস্ত দেবতাকে হত্যা করার চেষ্টা করেন। কিন্তু মৃত রাজার আত্মা দ্বারা পরাভূত হন। এর কারণেই সৃষ্টি রক্ষা পায়।
ডুয়ামুটেফ [Duamutef] - হোরাসের চার পুত্রের মধ্যে একজন। মৃতদেহের পাকস্থলী থাকে যে ‘ক্যানোপিক জার’ এর ভিতর, তার রক্ষক দেবতা। ইনি পূর্বদিকের দেখভাল করার দায়িত্বের অধিকারী। রূপ শেয়ালের। দেবী নেথ এর আচার আচরণ গতিবিধির উপর নজর রাখেন।
E
এন্নিড [Ennead] - ওসাইরিস মিথে যে বিচারসভার উল্লেখ মেলে সেখানে নয়জন দেবতার নাম পাওয়া যায়। আটুম, শু, তেফনাট, গেব, নাট, ওসাইরিস, আইসিস, নেপথিস এবং সেট। হেলিওপোলিসে এদের একসাথে উপাসনা করা হত। একসাথে এদেরকেই এন্নিড বলা হয়ে থাকে। ‘দ্য কনটেন্ডিংস অফ হোরাস অ্যান্ড সেট’ গল্পে সেট নাকি হোরাসকে মূল ভুমিকা পালন করবে সে বিষয়ে এই নয় দেবতা সিদ্ধান্ত নেয়। এরা ‘দ্যা গ্রেট এন্নিড’ নামেও পরিচিত ছিল। হেলিওপোলিসে গৌন দেবতাদের নিয়ে গঠিত একটি ‘লিটল এন্নিড’ ছিল বলেও প্রমাণ মেলে।
F
ফেটকেট [Fetket] - সূর্য দেবতা রা এর ‘বাটলার’ বা খানসামা। যিনি তাকে পানীয় পরিবেশন করতেন। ‘বারটেন্ডার’দের পৃষ্ঠপোষক দেবতা।
ফিল্ড অফ অফারিংস [Field of Offerings ] – নৈবেদ্য বা ভেট পেশ করার স্থান - ভূখন্ডের পশ্চিমে অবস্থিত মৃত্যু পরবর্তী জগতের একটি অঞ্চল। যা ওসাইরিসকে উৎসর্গ করা হয়েছিল। কিছু শিলালিপিতে একে ‘ফিল্ড অফ রিডস’ এর সমার্থক বলেও মনে করা হয়।
ফিল্ড অফ রিডস [Field of Reeds ] – নলখাগড়ার ক্ষেত্র - মৃত্যু পরবর্তী জগতের মিশরীয় স্বর্গ। যেখানে পৌঁছাতে হলে আত্মাকে ওসাইরিসের বিচারের সফলতা লাভ করতে হয়। পেতে হয় ন্যায়সঙ্গত হওয়ার শংসা। এই স্থান একাবারে পৃথিবীর জীবনের এক প্রতিরুপ। শুধু সেখানে অসুস্থতা, হতাশা বা মৃত্যুর কোনও আশঙ্কা নেই। পূর্ববর্তী জীবনের মতোই সবকিছু উপভোগ করার সুযোগ থাকে সেখানে।
বিয়াল্লিশ জন বিচারক [Forty-Two Judges] - বিয়াল্লিশজন দেবতা যারা পরকালে আত্মার বিচারের সময় ওসাইরিস, থথ এবং আনুবিসের সাথে উপস্থিত থাকেন। কোনও আত্মা নেতিবাচক স্বীকারোক্তি (নিজেকে নির্দোষ ঘোষণা) করলে, এই বিয়াল্লিশজন বিচারক ওসাইরিসকে পরামর্শ দেন, এই স্বীকারোক্তি গ্রহণ করা উচিত কিনা সে বিষয়ে। এদের ভিতর কিছু দেবতার নাম – ফার-স্ট্রাইডার, ফায়ার-এম্ব্রেসার, ডেমোলিশার, ডিস্টারবার, ওনার অফ ফেসেস, সারপেন্ট হু ব্রিংস অ্যান্ড গিভস।
হোরাসের চার পুত্র [Four Sons of Horus] - ডুয়ামুটেফ, হাপি, ইমসেট এবং কেবেহসেনুয়েফ নামের চারজন দেবতা। সমাধির অভ্যন্তরে এরা চারটি ক্যানোপিক জারে রাখা মৃতদের শরীরের নানান অংশের দিকে নজর রাখতেন। প্রত্যেকের পাহারা দেওয়ার জন্য তার আলাদা আলাদা বিষয় ছিল। রক্ষা করার জন্য এদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ অঙ্গ নির্দিষ্ট করা ছিল। এদের কে আবার আলাদালাদা দেবীরা নিজেদের নজর দারির ভিতর রাখতেন।
G
গেব [Geb] - পৃথিবী এবং ক্রমবর্ধমান জিনিস বা বস্তুর ঈশ্বর। ইনি শু এবং টেফনুটের ছেলে। নাট বা আকাশ দেবীর স্বামী।
জেনজেন ওয়ার [Gengen Wer ] - স্বর্গীয় রাজহংস। যার নামের অর্থ ‘গ্রেট হঙ্কার’ বা সোজা কথায় উচ্চকিত চিৎকার করার শক্তি সম্পন্ন। ইনি সৃষ্টির আদি ভোরে উপস্থিত ছিলেন এবং জীবনী শক্তি ধারণকারী স্বর্গীয় ডিমকে রক্ষা করেছিলেন (বা পেড়েছিলেন)। একজন রক্ষক দেবতা যার উপাসনা মিশরের ইতিহাসে একেবারে সুচনা লগ্নে করা হত। জেনজেন ওয়ার-এর অনুগামীরা নিজেদেরকে তাদের উপাস্যর মতোই প্রতিরক্ষামূলক গুণাবলীর দ্বারা উন্নত করতেন। সাথেই এমন তাবিজ/কবচ পরিধান করতেন যা প্রতিমুহূর্তে তাদের জীবন এবং পৃথিবীকে সম্মান করার কথা মনে করিয়ে দিত।
H
হা [Ha] - একজন রক্ষক দেবতা। পশ্চিমী মরুভূমির প্রভু এবং একই সাথে লিবিয়ানদের সর্বময় প্রভু নামেও পরিচিত। মিশরের পশ্চিমে অবস্থিত মরুভূমির এই দেবতা, দেবতা ইয়াওয়ের পুত্র। যিনি সম্ভবত মরুভূমির দেবতাই ছিলেন। হা লিবিয়ানদের থেকে সুরক্ষা প্রদান করতেন এবং মরুভূমিতে ভ্রমণকারীদের জন্য মরুদ্যান সৃষ্টি করতেন। একে চিত্রিত করা হয়েছে মাথার উপর মরুভূমির চিহ্ন সহ একজন শক্তিশালী যুবক রূপে।
হাপি [Hapi] - উর্বরতার, নীল নদের পলিমাটির দেবতা। এর সাথে প্লাবনেরও সংযোগ আছে। যার কারণে নদীর জল তীর উপচে দুদিকে ছড়িয়ে পড়ত। যার সুত্রে পৃথিবী সমৃদ্ধ হত পলি দ্বারা। এমন এক জিনিস, ফসল ফলানোর যার উপর কৃষকেরা নির্ভর করত। হাপি নিশ্চিতভাবেই একজন অতি প্রাচীন দেবতা, যার নামটি সম্ভবত নদীসূত্রেই থেকে এসেছে। উনি যিনি বন্যার সময় নদীর মূর্তিমান রূপ হিসাবে বিবেচিত হতেন। বড় মাপের স্তন এবং পেট বিশিষ্ট একজন পুরুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে হাপিকে। যা উর্বরতা এবং সাফল্যকে নির্দেশ করে।
হ্যাপি [Hapy] – ইনিও হাপি নামে পরিচিত। একজন রক্ষক দেবতা, হোরাসের চার পুত্রের একজন। যিনি সমাধির ভিতর ফুসফুস ধারণকারী ক্যানোপিক জারকে রক্ষা করেন। উত্তরদিকের দেখভাল করার দায়িত্বও পালন করেন। রূপ বেবুনের। দেবী নেফথিস এর গতিবিধির দিকে নজর রাখেন।
হার্ডেডেফ [Hardedef] - রাজা খুফুর পুত্র (কিওপস নামে পরিচিত, ২৫৮৯-২৫৬৬ খ্রিস্টপূর্ব) একটি বই লিখেছিলেন, যা ‘ইনস্ট্রাকশন ইন উইজডম’ নামে পরিচিত। কাজটা এতটাই অসাধারণ মানের হয়েছিল যে, ওটাকে একজন দেবতার কাজ হিসাবে বিবেচিত করা হয়েছিল। এই সূত্রেই মৃত্যুর পরে তাকে দেবতা বলে মেনে নেওয়া হয়।
হারোয়রিস [Haroeris] – ‘হোরাস দ্য এল্ডার’ এর আকাশিক রূপের গ্রীক নাম। (এছাড়াও ইনি ‘হোরাস দ্য গ্রেট’ নামেও পরিচিত। যিনি পার্থিব জগতে বাজপাখি হিসেবে আবির্ভূত হন।)
হারপোক্রেটিস [Harpocrates] - ওসাইরিস এবং আইসিসের পুত্র, ‘হোরাস দ্য চাইল্ড’ এর গ্রীক এবং রোমান নাম। ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে রাখা এক অল্প বয়স্ক ডানাওয়ালা ছেলে হিসাবে একে চিত্রিত করা হয়। গ্রীসে রহস্য, নীরবতা এবং গোপনীয়তার দেবতা হিসাবে পূজিত হন।
হাথোর [Hathor] - প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে পরিচিত, জনপ্রিয় এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের মধ্যে একজন। রা-এর কন্যা এবং কিছু গল্পে, ‘হোরাস দ্য এল্ডার’ এর স্ত্রী। খুব প্রাচীন এই দেবীকে রা পাপের জন্য মানবতাকে ধ্বংস করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। অন্যান্য দেবতারা রা-এর কাছে অনুরোধ করেন, সব মানুষ শেষ হয়ে যাওয়ার আগে হাথোরের ধ্বংসলীলা থামানোর জন্য। কারন তা না হলে শিক্ষা নেওয়ার মত কোনও মানুষই তো থাকবে না। রা তখন রক্তের মতো দেখতে লাল রঙের উত্তেজক পানীয় ডেনডেরাতে রেখে দেন। রক্তের লালসায় যা হাথর পান করেন এবং ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙার পর তিনি পরিণত হন পরোপকারী দেবীতে। সকলের বন্ধু হিসাবে তার রূপান্তর ঘটে। এরপর থেকে উনি আনন্দ, অনুপ্রেরণা, উদযাপন, প্রেম, নারী, নারীর স্বাস্থ্য, সন্তানের জন্মদান এবং মাতালদের পৃষ্ঠপোষক দেবীতে বদলে যান। তার অনেক নামের একটি নাম "দ্য লেডি অফ ড্রাঙ্কনেস"। এই দেবীর আবাস সিকামোর গাছে বলে ধারণা করা হয়। যে কারণে 'দ্য লেডি অফ দ্য সিকামোর' নামেও ইনি পরিচিত ছিলেন৷ মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ইনি মৃতদের আত্মাকে স্বর্গের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেন। রা-এর সূর্য বজরায় থাকা দেবতাদের মধ্যে ইনি একজন। যিনি এটিকে অ্যাপেপের কবল থেকে রক্ষা করেছিলেন। কৃতজ্ঞতা এবং কৃতজ্ঞ হৃদয়ের সাথেও এই দেবীকে এক করে দেখা হয়। গ্রীকরা একে অ্যাফ্রোডাইটের সাথে যুক্ত করেছেন। তাকে একটি গরু বা গরুর মাথাওয়ালা একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। বাট নামক দেবী থেকে ইনি বিবর্তিত হয়েছেন বলেই ধরে নেওয়া হয়। তার বৈশিষ্টগুলি পরবর্তী সময়ে আইসিসের বৈশিষ্ট রূপে সংস্থাপিত হয়।
হাথোর-নেবেট-হেতেপেট [Hathor-Nebet-Hetepet] - হেলিওপোলিসে উপাসনা করা হত হাথোরের এই মাতৃরূপের। ইনি সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থানকারী দেবতা আটুম (রা) এর হাত, বা সক্রিয় অংশের প্রতিনিধিত্ব করেন।
হাত্মেহিত [(Hatmehit (Hatmehyt)] - মেন্ডেসের বদ্বীপ অঞ্চলে পূজিত মাছেদের দেবী। নামের অর্থ ‘মাছেদের ভিতর অগ্রগণ্যা’। মেন্ডেসের আশেপাশের নোম (প্রদেশ) অঞ্চলের মাছ রূপী টোটেম প্রতীক থেকেই এই দেবী উদ্ভূত বলেই মনে করা হয়।
হাউরুন [Haurun] - গিজার গ্রেট স্ফিংসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত একজন রক্ষক দেবতা। উৎস অনুসারে ইনি একজন কান্নাইট দেবতা। যার সুত্র ধ্বংসের সাথে যুক্ত এবং ইনি মৃত্যুর গাছ লাগিয়েছিলেন। কান্নান এবং সিরিয়ান শ্রমিক ও বণিকদের দ্বারা মিশরে এসেছিলেন ইনি। রূপান্তরিত হয়ে যান নিরাময়ের দেবতায়। এইসব বিদেশী শ্রমিকদের সুত্রেই গিজার স্ফিংক্সের সাথে তার সম্পর্ক তোইরি হয়েছিল। এইসব শ্রমিকরা বিশ্বাস করত যে, স্ফিংস আসলে হাউরুনকে প্রতিনিধিত্ব করে। যে কারণে তারা ওই বিশাল সামনে তাদের দেবতার একটি মন্দিরও তৈরি করেছিল। শিকারে যাওয়ার আগে সুরক্ষার জন্য তার নামের উল্লেখ সহযোগে একটি মন্ত্র অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। যার কারণে ‘দ্য ভিক্টোরিয়াস হার্ডসম্যান’ বা বিজয়ী পশুপালক নামেও ইনি পরিচিত।
হেডেটেট [Hedetet]– কাঁকড়াবিছের দেবী। এই প্রাণীদের বিনিদেরহাত থেকে ইনি আমাদের রক্ষা করেন। সার্কেটে দেবতার প্রাথমিক রূপ।
হেহ এবং হউহেট [Heh এবং Hauhet] – অনন্তকালের দেবতা ও দেবী। হেহকে একটি ব্যাঙ এবং হউহেটকে সাপ হিসাবে চিত্রিত করা হয়। তাদের নামের অর্থ ‘অন্তহীনতা’। ওগডোডের আদি দেবতাদের মধ্যে এদের স্থান ছিল।
হেকেট (হেকেত) [Heqet (Heket)] - উর্বরতা এবং প্রসবের দেবী। ব্যাঙ বা ব্যাঙের মাথাওয়ালা নারী হিসাবে চিত্রিত।
হেরেট-কাউ [Heret-Kau ] - প্রতিরক্ষামূলক দেবী। নামের অর্থ ‘যিনি সব আত্মা[স্পিরিট]দের উপরে অবস্থান করেন’। প্রাচীন সাম্রাজ্যের(আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কালে তাকে একজন জীবনদাতা ‘স্পিরিট’ হিসাবে উপাসনা করা হত। যিনি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে মৃতদের আত্মাকেও রক্ষা করতেন। তার লালন-পালনের এই গুণাবলী পরে আইসিসের গুণ হিসাবে আরোপিত হয়েছিল।
হেকা [Heka] - প্রাচীন মিশরের অন্যতম প্রাচীন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের মধ্যে একজন। জাদু ও ওষুধের পৃষ্ঠপোষক দেবতা। কিন্তু তারসাথেই মহাবিশ্বের শক্তির আদি উৎসও ছিলেন তিনি। অন্যান্য দেবতাদের আগে থেকেই তার অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল। উপস্থিত ছিলেন সৃষ্টির কাজে। যদিও পরবর্তী পৌরাণিক কাহিনীতে, তাকে মেনহেত এবং খুনুমের পুত্র এবং ল্যাটোপলিসের ত্রয়ীর এক অংশ হিসাবে পাওয়া যায়। তাকে লাঠি এবং ছুরি বহনকারী একজন পুরুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। সেই সময়ে চিকিত্সকরা হেকার পুরোহিত হিসাবে পরিচিত ছিলেন। প্রাচীন মিশরে চিকিৎসা অনুশীলনের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল জাদুবিদ্যা। আর এই কারণেই হেকা চিকিৎসকদের কাছে একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবতায় পরিণত হন। গল্প কথা অনুসারে, তিনি দুটি সাপকে হত্যা করেছিলেন এবং তার ক্ষমতা প্রকাশের প্রতীক হিসাবে একটি লাঠিতে মৃত প্রাণী দুটিকে জড়িয়ে রেখেছিলেন। এই বিশেষ চিত্ররূপটি (আসলে সুমেরীয়দের কাছ থেকে নেওয়া) গ্রীকদের সভ্যতার অংশ হয়ে যায়। যারা এটিকে তাদের দেবতা হার্মিসের সাথে যুক্ত করে। নামকরণ করে ‘ক্যাডুসিয়াস’। আধুনিক কালে, প্রায়শই চিকিৎসা পেশার সাথে সম্পর্কিত আইকনোগ্রাফিতে এই ক্যাডুসিয়াসকে ভুল করে ‘রড অফ অ্যাসক্লেপিয়াস’ বলে পেশ করা হয়।
হেরিশাফ [Heryshaf] - উর্বরতা দেবতা। মেষের মাথাওয়ালা মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। ইনি আদি রাজবংশের যুগের একজন প্রাচীন দেবতা (আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিস্টপূর্ব)। পরে আটুম (রা) এর সাথে মিশে যান এবং তার গুণাবলী ওসাইরিসের গুণ হিসাবে প্রচলিত হয়।
হেসেট [Heset] - আনন্দ উপভোগ এবং উত্তেজক পানীয়র সাথে সম্পর্ক যুক্ত এই সত্তা খাদ্য ও পানীয়ের দেবী রুপে পরিচিত। ইনিও মিশরের প্রথম দিকের দেবী, যাকে একটি গরু হিসেবে দেখানো হয়েছে। যার দুই শিংয়ের উপর রাখা আছে খাবারের পাত্র এবং বাঁট থেকে অঝোর ধারায় ঝরে পড়ছে দুধ। বিয়ার জাতীয় উত্তেজক পানীয়কে "হেসেটের দুধ" হিসাবে উল্লেখ করা হয়। এই দেবী পরে হাথোরের সাথে মিশে যান। নিমগ্ন হন। ইনি এমনেভিস এবং আনুবিসের সাথে হেলিওপলিসের ত্রিত্বের অংশ ছিলেন।
হেতেপেস-শেখুস [Hetepes-Sekhus] - রা-এর চোখের এক মূর্তরূপ। যিনি মৃত্যু পরবর্তী জীবনকালে কোবরা দেবী হিসাবে আবির্ভূত হন এবং ওসাইরিসের শত্রুদের ধ্বংস করেন। এর সাথে একদল কুমিরকেও সঙ্গে চিত্রিত করা হয়েছে।
হোরাস [Horus] - একজন প্রারম্ভিক পক্ষী দেবতা। যিনি প্রাচীন মিশরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবতা হয়ে উঠেছিলেন। সূর্য, আকাশ এবং ক্ষমতা এর সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। মিশরের প্রথম রাজবংশের (আনুঃ ৩১৫০-২৮৯০ খ্রিষ্টপূর্ব) সাথে হোরাসের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়। যদিও 'হোরাস' নামটি বেশ কয়েকটি পক্ষী দেবতাকে নির্দেশ করে। এর ভিতর প্রধানত দুটি : ‘হোরাস দ্য এল্ডার’, সৃষ্টির শুরুতে জন্মগ্রহণকারী প্রথম পাঁচ দেবতার মধ্যে একজন এবং ‘হোরাস দ্য ইয়ংগার’, যিনি ওসাইরিস এবং আইসিসের পুত্র ছিলেন। ওসাইরিস মিথ বা কিংবদন্তীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির পর, ‘হোরাস দ্য ইয়ংগার’ মিশরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবতায় পরিণত হন। গল্পে, ওসাইরিস তার ভাই সেটের হাতে খুন হওয়ার পর, হোরাসকে তার মা বদ্বীপের জলাভূমিতে বড় করে তোলেন। যখন উনি পূর্ণবয়স্ক পুরুষে পরিণত হন, তখন পৈত্রিক রাজ্য উদ্ধার করার জন্য জন্য তার কাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং জয়লাভ করেন। দেশের আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। মিশরের রাজারা, কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, প্রায় সবাই নিজেদেরকে জীবনকালে হোরাস এবং মৃত্যুর পর ওসাইরিসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত এভাবাই নিজেদের পেশ করেছেন। রাজাকে হোরাসের জীবন্ত অবতার বলে মনে করা হত। তার মাধ্যমেই ঈশ্বর মানুষকে সমস্ত ভাল জিনিস প্রদান করেন বলে বিশ্বাস করা হত। হোরাসকে সাধারণত বাজপাখির মাথা ওয়ালা একজন পুরুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়। তবে বিভিন্ন ধরণের রূপের ছবি দিয়েও তাকে দেখানো হয়েছে। তার প্রতীক ‘আই অফ হোরাস’ বা হোরাসের চোখ এবং বাজপাখি।
হু [Hu ] - কথ্য শব্দের দেবতা। সৃষ্টির সূচনা লগ্নে আটুম (রা) কথিত প্রথম শব্দের মূর্ত রূপ। যা সমস্ত কিছুকে সৃষ্টি করেছিল। সিয়া এবং হেকার সাথে সম্পর্ক যুক্ত। সিয়া - হৃদয়, হু - জিহ্বা এবং হেকা তাদের অন্তর্নিহিত শক্তির প্রতিনিধিত্ব করতেন। যা তাদের সমস্ত শক্তি প্রদান করেছিল। হুকে প্রায়শই হেকা বা আটুমের শক্তির প্রতিনিধি হিসাবে দেখা হয়। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময় যে বিশেষ কথা উচ্চারণ করা হয় তা আসলে এই দেবতার রূপ। যার পাঠ আত্মাকে পরকালের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।
I
ইয়াহ [Iah (Yah)] চন্দ্র দেবতা। মিশরীয় ক্যালেন্ডারে বিশিষ্টভাবে চিত্রিত। পৃথিবী সৃষ্টির গল্প অনুসারে, গেব (পৃথিবী) এবং নাট (আকাশ) এর মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক লক্ষ্য করে আটুম ক্ষুব্ধ হন। তাদের আলাদা করে দেন এবং ঘোষণা করেন যে, নাট বছরের কোনও দিনে তার সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন না। দেবতা থথ আবির্ভূত হন এবং ইয়াহ-র সাথে জুয়া খেলেন। বাজি রাখা হয় পাঁচ দিনের চাঁদের আলো। অবধারিতভাবেই থথ জিতে যান এবং চাঁদের আলোর সময়কালকে আলাদা দিন রূপে বিভক্ত করেন। যেগুলি, আটুম দ্বারা নির্ধারিত বছরের দিনের অংশ ছিল না। ওই বিশেষ সময়কালে নাট তার সন্তানের জন্ম দেন। প্রথম পাঁচ দেবতার জন্ম দেন উনি: ওসাইরিস, আইসিস, সেট, নেফথিস, এবং হোরাস দ্য এল্ডার। মিশরীয়রা এই পাঁচ জাদু দিবস কে তাদের ক্যালেন্ডারের বিশেষ অঙ্গ হিসাবে মান্যতা প্রদান করে। ইয়াহ অবশেষে দেবতা খোনসুর সাথে মিশে যান বা লীন হয়ে যান।
ইয়াবেট [Iabet] - উর্বরতা এবং পুনর্জন্মের দেবী। যাকে ‘শী অফ দ্য ইষ্ট’ বা পূর্বের নারী নামেও ডাকা হয়ে থাকে। কখনও কখনও ইনি আমেনেটের সাথে সম্পর্ক যুক্ত (পশ্চিমের নারী)। ইয়াবেট পূর্বদিকের মরুভূমির দেখভাল করেন। সময়ের সাথে সাথে উনি এই অঞ্চলের মূর্ত রূপ হিসাবে বিবেচিত হতে থাকেন। উনি ‘ক্লিনজার অফ রা’ নামেও পরিচিত ছিলেন। কারণ ভোরের আকাশে আবির্ভূত হওয়ার আগে ইয়াবেট সূর্যকে স্নান করিয়ে দেন। এই দেবীকে সকালের সূর্যের সতেজতার রূপ হিসাবেও ব্যক্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ইনি আইসিসের সাথে এক হয়ে যান।
ইহাই/ইহি [Ihy] - সঙ্গীত এবং আনন্দের দেবতা, বিশেষ করে সিস্ট্রাম* নামক বাদ্যযন্ত্রের। হাথোর এবং হোরাস দ্য এল্ডারের পুত্র। ডেনডেরাতে হাথোরের সাথেই এর উপাসনা করা হত এবং নানান উত্সবগুলিতে এদের আহ্বান জানানো হতো। ডেনডেরায় ছিল শিশু প্রসব করানোর বিশেষ ভবন। সেখানকার দেওয়ালে শিলালিপিতে এই দেবতার জন্মকে সম্মান জানিয়ে কিছু কথা লেখা ছিল। মানুষ বিশ্বাস করত, এর সূত্রে আনন্দ এবং সঙ্গীত সহযোগে শিশুদের জন্মের সময় পৃথিবীতে স্বাগত জানানো হচ্ছে। সিস্ট্রাম বাদ্যযন্ত্র সহ একটি শিশু হিসাবে এই দেবতাকে চিত্রিত করা হত।
ইমহোটেপ [Imhotep] - রাজা জোসারের উজির বা মন্ত্রী ( আনুঃ ২৬৭০ খ্রিষ্টপূর্ব)। যিনি স্টেপ বা ধাপযুক্ত পিরামিডের নকশা বানীয়েছিলেন এবং বাস্তবে নির্মাণ করেছিলেন। জীবনকাল ২৬৬৭-২৬০০ খ্রিষ্টপূর্ব। নানা বিষয়ে জ্ঞানী মানুষটি পলিম্যাথ বিশেষজ্ঞ ছিলেন। নামের অর্থ ‘যিনি শান্তির সময়ে আসেন’। তার মৃত্যুর পরে, তাকে জ্ঞান এবং ওষুধের দেবতা হিসাবে সম্মানিত করা হয়েছিল। গ্রীকরা ইমহোটেপকে এস্কুলাপিয়াস এর চরিত্রে রূপান্তরিত করেছিল। রোগ নিরাময়ের সময় মন্ত্র সহযোগে তাকে এই নামেই আহ্বান করত। প্রচলিত বিশ্বাসের বিপরীতে ইনি চিকিৎসা করতেন। তার ভাবনা অনুসারে, রোগের উৎপত্তির কারণ প্রাকৃতিক। এর সাথে দেবতাদের কাছ থেকে কোনোরকম শাস্তি পাওয়ার সম্পর্ক নেই।
ইমসেটি [Imsety] - একজন রক্ষক দেবতা। হোরাসের চার পুত্রের একজন, যিনি লিভার বা যকৃৎ সংরক্ষণ করে রাখা ক্যানোপিক জারকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। এর দায়িত্ব ছিল দক্ষিণদিকের দেখাশোনা করার। ইমসেটির উপর নজরদারি করতেন আইসিস। চিত্রায়ণ করা হত একজন মানব পুরুষের রূপে।
ইপি [Ipy] - একজন মাতৃ দেবী, যাকে কিছু গ্রন্থে ওসাইরিসের মায়ের সাথে সম্পর্ক যুক্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ওপেট এবং ‘দ্য গ্রেট ওপেট’ নামেও পরিচিত। শুধু জলহস্তী অথবা জলহস্তী, কুমির, মানবী এবং সিংহের সংমিশ্রণ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে এর রুপ। যেখানে সিংহের মাথা, জলহস্তির শরীর, মানুষের মতো হাত এবং সিংহের মতো পাওয়ালা এক সত্ত্বা রূপে দেখানো হয়েছে। ইনি ‘মিস্ট্রেস অফ ম্যাজিকাল প্রোটেকশন’ বা জাদুপদ্ধতিতে রক্ষাকারিণী নামেও পরিচিত ছিলেন। রাজাকে রক্ষা করা এবং দেখভাল করার জন্য পিরামিডের দেওয়ালের গায়ের লেখনীতে এর উল্লেখ মেলে।
ইশতার [Ishtar] - প্রেম, যৌনতা এবং যুদ্ধের মেসোপটেমিয়ার একজন দেবী। মূলত ইনান্না নামে সুমেরীয় এবং আক্কাদীয়দের দেবী রূপেই ইনি পরিচিত ছিলেন, যিনি অ্যাসিরিয়ানদের কাছে ইশতার নামের দেবীতে পরিণত হয়েছিলেন। অন্যান্য অনুরূপ দেবীদের, গ্রীকদের ‘অ্যাফ্রোডাইট’, ফিনিশিয়ানদের ‘আসতার্তে’, মিশরীয়দের ‘হাথোর’ এবং হিট্টিদের ‘সাউস্কা’ ইত্যাদি, রূপ বিকাশের অনুপ্রেরণা হিসাবে একে দেখা যায়। সম্ভবত প্রথম দিকের রাজবংশর যুগে ( আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিষ্টপূর্ব) ব্যবসাবাণিজ্যের সূত্রেই মিশরে তার আগমন ঘটে। তবে ৬৬৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে অ্যাসিরিয়ান আশুরবানিপালের মিশর বিজয়ের পরেই তিনি বিশিষ্ট স্থান অর্জন করেছিলেন।
আইসিস [Isis] - মিশরীয় ইতিহাসের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং জনপ্রিয় দেবী। কার্যত ইনি মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সময়ের সাথে সাথে, সর্বোচ্চ দেবতা রূপে "মাদার অফ দ্য গডস" এর পদে উন্নীত হয়েছিলেন। সহ দেবতাদের সাথে সাথেই এই দেবী মানুষের যত্ন নেওয়ার দিকেও নজর রাখতেন। ইনি প্রথম পাঁচ দেবতার (ওসিরিস, আইসিস, সেট, নেফথিস এবং হোরাস দ্য এল্ডার) একজন। ওসাইরিসের বোন তথাপি স্ত্রী। হোরাস দ্য ইয়ঙ্গারের মা এবং প্রতীকীভাবে প্রত্যেক মিশরীয় রাজার মা হিসাবে তাকে উল্লেখ করা হত। এই দেবীর মিশরীয় নাম, এসেট [Eset], যার অর্থ ‘সিংহাসনের দেবী’। কারণ রাজাদের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক। অবিশ্বাস্য ক্ষমতার কারণে ইনি ‘ওয়েরেট-কেকাউ’ বা ‘দ্য গ্রেট ম্যাজিক’ নামেও পরিচিত ছিলেন। জীবনে মানুষের যত্ন তো নিতেনই, তার সাথেই মৃত্যুর পরে নিরাপদে স্বর্গে যেতেও তাদের সাহায্য করার জন্য উপস্থিত হতেন। ৩৩১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটের মিশর বিজয়ের পর, তার উপাসনারীতি গ্রীসে পৌঁছায়। তারপরে রোমে ভ্রমণ করে। রোমান সাম্রাজ্যের সময়, ব্রিটেন থেকে ইউরোপ হয়ে আনাতোলিয়া পর্যন্ত তাদের সাম্রাজ্যের প্রতিটি কোণে এই দেবীর উপাসনা করা হত। ‘কাল্ট অফ আইসিস’ ছিল খ্রিস্টধর্ম নামক নতুন ধর্মের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। খ্রিস্টীয় ৪র্থ থেকে ৬ষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে, নানান আইকনোগ্রাফি সূত্রে প্রমাণ মেলে আইসিস কাল্টের নীতি ও বিশ্বাসেরগুলিকে নতুন ধর্ম বিশ্বাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ভার্জিন মেরি তার পুত্র যীশুকে নিজের কোলে ধরে রেখেছেন এমন চিত্র সরাসরি আইসিস থেকে এসেছে। যেখানে দেখা যায় উনি তার পুত্র হোরাসকে একইভাবে জড়িয়ে ধরে আছেন। যীশুর মৃত্যু ও পুনরুজ্জীবিত হওয়ার গল্পও ওসাইরিসের বিখ্যাত গ্লপের রূপভেদ বলাই যায়।
আইসিস-ইউথেরিয়া [Isis-Eutheria] - আইসিসের এক গ্রীক সংস্করণ যার উপাসনা মিশরে করা হয়েছিল। মনে করা হয়, যখন ইনি ওসাইরিসের জন্য শোক প্রকাশ করেছিলেন, তখন সেটাই নীলনদের প্লাবনের কারণ হয়েছিল।
ইউসাসেট [Iusaaset] – প্রাথমিক পর্বের একজন মাতৃ দেবী। একে ‘দেবতাদের ঠাকুরমা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। বিশ্বের সৃষ্টিতে আটুমের সাথে এর সংযোগ ছিল বলে বিশ্বাস। প্রারম্ভিক রাজবংশের যুগে (আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিষ্টপূর্ব) একে একজন নারী রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। যার মাথায় মুকুটের মত ইউরেয়াস এবং সৌর চাকতির অবস্থান। হাতে রাজদণ্ড এবং ‘আঁখ’, যা জীবনের প্রতীক। দেবীর সাথে অ্যাকাশিয়া, জীবন বৃক্ষ নামে মিশরে পরিচিত প্রাচীনতম গাছ, গাছের সম্পর্ক আছে। তাকে ‘লেডি অফ দ্য অ্যাকাসিয়া’ নামে পরিচিত ছিলেন। যা পরে হাথোরের উপাধিতে পরিণত হয়। গ্রীকদের কাছে ইউসাসেট দেবী সাওসিস নামে পরিচিত ছিলেন।
ইউ/ইয় [Iw] - হেলিওপোলিসে উপাসনা করা হত হাথোর এবং আতুমের সাথে যুক্ত এই সৃষ্টি সম্পর্কিত দেবীর। এই দেবীর ভিতর একসাথে হাথোর, নেবেট এবং হেটেপেটের গুণাবলী একত্রিত ছিল।
J
বিচারের দেবতাগন [Judgement Deities] – বিয়াল্লিস জন বিচারক, যাদের কথা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে।
জুপিটার-আমুন [Jupiter-Amun] - জিউস-আমুনের রোমান সংস্করণ। দেবতাদের রাজা। মিশরের সিওয়া মরূদ্যানে এর উপাসনা করা হত।
K
কাবেচেত (কেবেহওয়েট বা কেভেট) [Kabechet (Kebehwet or Qebhet)] - মূলত একজন স্বর্গীয় সর্প দেবী। যিনি পরে আনুবিসের কন্যা এবং শেষকৃত্যর দেবী হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছিলেন। ‘হল অফ ট্রুথ’ এ যখন মৃতদের আত্মারা বিচারের অপেক্ষায় থাকে তখন ইনি তাদের শীতল জল সরবরাহ করেন। মৃতদের বন্ধু হিসাবে নেফথিসের সাথে এর সম্পর্ক ছিল।
কাগেম্নি [Kagemni] - রাজা স্নেফেরুর (আনুঃ ২৬১৩-২৫৮৯ খ্রিষ্টপূর্ব) একজন উজির বা মন্ত্রী। যিনি ‘কাগেম্নির নির্দেশ’ নামে পরিচিত জ্ঞান বা প্রজ্ঞা লাভের পাঠ্যপুস্তক রচনা করেছিলেন। বইটি এত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছিল যে, রাজপরিবারের শিশুদের অবশ্যপাঠ্য রূপে বিবেচিত হয়। মৃত্যুর পরে তাকে দেবতার সম্মান দেওয়া হয়েছিল এবং জ্ঞানের দেবতা হিসাবে উপাসনা করা শুরু হয়।
কেক এবং কউকেট [Kek and Kauket ] - অস্পষ্টতা এবং রাতের দেবতা। হারমোপোলিসের আসল ওগডোডের সদস্য। কেক এবং কউকেট অন্ধকারের পুরুষ এবং নারীর রূপভেদ। কিন্তু এরা কোনোভাবেই মন্দর সাথে যুক্ত সম্পর্ক যুক্ত নন। কেক ভোরের কয়েক ঘণ্টা সময়কালের দেবতা ছিলেন। তাকে ‘আলোর আনয়নকারী’ নামে ডাকা হত। কারণ তিনি দেবতা রা-এর সূর্য বজরাকে পাতাল থেকে উঠিয়ে আকাশের দিকে পরিচালিত করতেন। কউকেত, তার নারীসূচক ভারসাম্য রক্ষাকারিণী সত্তাকে একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল। যার মাথা সাপের। এই দেবীকে ‘আঁধারের আনয়নকারিণী’ নামেও ডাকা হত। ইনি সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়ের আগে পরের গোধূলির সময় কালের দেবী। সূর্যের বজরাকে পাতালে প্তহ দেখীয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব ছিল কউকেটের।
খেন্টেখতাই (খেন্তে-খতাই) [Khentekhtai (Khente-Khtai)] - চতুর্থ রাজবংশর সময় কালের (আনুঃ ২৬১৩-২৪৯৮ খ্রিষ্টপূর্ব) এথ্রিবিস নগরের কুমির দেবতা। তার নাম এবং প্রতিরক্ষামূলক গুণাবলী পরে হোরাসের উপর আরোপিত হয়।
খেন্টিয়ামেন্টি (খেন্টিয়ামেন্টিউ) [Khentiamenti (Khentiamentiu)] - অ্যাবিডোসের উর্বরতার দেবতা যিনি পরে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দেবতায় পরিণত হন। তার নামের অর্থ ‘পশ্চিমীদের মধ্যে প্রথম’ (‘পশ্চিমীদের ভিতর সর্বাগ্রে অবস্থানকারী’ও বলা হয় )। এর সূত্রেই তাকে মৃতদের দেবতা (পশ্চিমের সাথে সম্পৃক্ত) হিসাবেও তার ভূমিকা ছিল ধরে নেওয়াই যায়। এই দেবতার গুণাবলী পরে ওসাইরিসের সাথে মিশে যায়।
খেনমু (খনুম) [Khenmu (Khnum)] – ‘দ্য গ্রেট পটার’ বা মহান কুমোর নামেও পরিচিত, খেনমু ছিলেন উচ্চ মিশরের আদি দেবতা। সম্ভবত মূল উৎস নুবিয়া। প্রারম্ভিক পৌরাণিক কাহিনীতে, তিনি ছিলেন সেই দেবতা যিনি নীল নদের কাদামাটি থেকে মানুষ তৈরি করেছিলেন। তারপরে তাদের উঁচুতে তুলে ধরেছিলেন, যাতে রা-এর আলো তাদের উপর এসে পড়ে এবং তারা জীবন লাভ করতে পারে। এরপর মানুষকে একটি গর্ভে স্থাপন করা হয়েছিল। যেখান থেকে তারা পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিল। খেনমুকে একটি ভেড়ার মাথাযুক্ত দেবতা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যা পুরুষত্ব এবং উর্বরতার প্রতীক। ইনি নুবিয়ার মিশরীয় সীমান্ত এলাকা এলিফ্যান্টাইনে দেবতা আনুকেট এবং স্যাটিসের সাথে একটি ত্রিত্ব গঠন করেছিলেন। এর সাথে আর এক ভেড়ার মাথা যুক্ত দেবতা খেরটির সাথে সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়। যদিও পরবর্তী জন সম্পূর্ণ ভিন্ন সত্তা। খেনমু কুমোর এবং যারা সেরামিকের কাজ করেন তাদের পৃষ্ঠপোষক দেবতা।
খেপ্রি [Khepri] - সূর্য দেবতা রা এর একটি রূপভেদ। তার সকালের রূপ, যার প্রতিনিধিত্ব করে স্ক্যারাব বিটল।
খেরটি (চের্টি) [Kherty (Cherti)] - আন্ডারওয়ার্ল্ড বা পাতালের একজন ভেড়ার মাথাওয়ালা দেবতা। যিনি মৃতকে তাদের শেষ যাত্রায় নৌকায় চাপিয়ে পরকালে নিয়ে যেতেন। প্রাচীন সাম্রাজ্যকালে ( আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিষ্টপূর্ব) ইনি ওসাইরিসের সাথে মৃত্যু পরবর্তী জীবন শাসন করতেন বলে জানা গেছে। খেরটির দায়িত্বে ছিল হল অফ ট্রুথের প্রবেশদ্বার এবং হলওয়ে। ওসাইরিস রাজত্ব করতেন মূল হল এবং শরকাঠির ট ক্ষেত্রে। মৃত ব্যক্তিরা পরবর্তী জীবনে আসার পর অন্যান্য দেবতারা তাদের অভ্যর্থনা জানাত। এরপরে খেরটি তাদের বিচারের জন্য হল অফ ট্রুথে নিয়ে যেতেন। এই ভূমিকায় তার আচরণ ছিল পরোপকারী। কিন্তু কিছু শিলালিপি থেকে জানা যায় যে, তিনি সেইসব সত্তা দের শত্রু ছিলেন যারা মৃত রাজাকে আন্ডারওয়ার্ল্ডে প্রবেশের সময় আটকানোর চেষ্টা করত। ঘুরিয়ে বললে, তাকে রাজাকে রক্ষা করার জন্যই রাখা হত এটাও বলা যায়।
খোনসু (কন্স, ছনসু, খেনসু, বা ছোন্সু) [Khonsu (Kons, Chonsu, Khensu, or Chons)] - নামের অর্থ ‘দ্য ট্রাভেলার’ বা ভ্রমণকারী। চাঁদের দেবতা ছিলেন। পিতা আমুন এবং মা মাতের সাথে থিবসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ত্রিত্ব গঠন করেছিলেন। তাকে একটি মমি হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যার মাথায় ইউরেয়াস এবং চাঁদের চাকতি রয়েছে। হাতে আঁকশি লাগানো লাঠি আর ঝাড়ন। মাতের পুত্র হিসাবে খনসু পূর্বের দেবতা মন্টুর জায়গা নেন এবং তার প্রতিরক্ষামূলক গুণাবলীও গ্রহণ করেন। নতুন সাম্রাজ্যের সময় (১৫৭০-১০৬৯ খ্রিস্টপূর্ব) অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন খোনসু। আমুনের পরে দেবতাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসাবে তার উপাসনা করা হত। নিরাময়ের দেবতা মনে করা হত তাকে। খোনসুর ছবির অসুস্থকে সুস্থ করার অলৌকিক ক্ষমতা ছিল বলে বিশ্বাস করা হত।
L
লেডি অফ অ্যাকাশিয়া [Lady of the Acacia ] - ‘দেবতাদের ঠাকুরমা’ দেবী ইউসাসেটের নামগুলির মধ্যে একটি। যার গুণাবলী পরে হাথোরকে প্রদান করা হয়েছিল।
লেডি অফ দ্য সিকামোর[Lady of the Sycamore ] - হাথোরের অনেক নামের মধ্যে একটি। বিশ্বাস করা হত যে, উনি সিকামোর গাছে অবস্থান করেন। ধর্মের দিক থেকে এই গাছ অত্যন্ত পবিত্র ছিল।
লেক অফ ফ্লাওয়ারস (লিলি লেক) [Lake of Flowers (Lily Lake)] - মৃত্যু পরবর্তী জগতের একটি জলাশয় যা ন্যায্য বা বৈধ রূপে মৃতদের আত্মারা অতিক্রম করার পরে শরকাঠির ক্ষেত্রে অবস্থিত স্বর্গে পৌঁছাতে পারত। ‘বুক অফ দ্য ডেড’-এ, বৈধ আত্মারা এই হ্রদের তীরে সাঁতার কাটতে এবং আনন্দ উপভোগ করতে সক্ষম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
লেটস-ফিশ [Lates-Fish ] - দেবী নেথের সূত্রে পবিত্র রূপে বিবেচিত নীল নদের এক ধরনের মাছ। এস্না নামক ঐশ্বরিক সত্তা হিসাবে উপাসনা করা হয়।
M
মাহেস (মাহেস, মিহোস বা মাইসিস) [Maahes (Mahes, Mihos, or Mysis)] - একজন শক্তিশালী সৌর দেবতা এবং নিরপরাধীদের রক্ষাকর্তা। সিংহর সাথে থাকা সিংহর মাথাওয়ালা একজন মানুষ যার হাতে থাকে একটা দীর্ঘকাল ছুরি। তার নাম সম্প্রীতি এবং সত্যের দেবী মা'আতের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। সেই সূত্রে আর নামের অর্থ হতে পারে ‘মাআতের আগে অবস্থানকারী সত্য’। এই ব্যাখ্যাটিকে মেনে নিলে সম্ভবত তার অন্যান্য নামগুলির অর্থ বুঝতে সুবিধা হবে। ‘লর্ড অফ স্লটার’ এবং ‘দ্য স্কারলেট লর্ড’ এর ভিতর অন্তর্ভুক্ত। যারা দেবীর নির্দেশিত পবিত্র জীবন বিধান লঙ্ঘন করে তাদেরকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব এই দেবতার। সাধারণতভাবে তাকে বাস্টেটের পুত্র বলে মনে করা হয়। কিন্তু সেখমেটের পুত্র হিসাবেও তার উল্লেখ করা হয়, কারণ উভয়েই বিড়াল/সিংহের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি সম্ভবত দেবতা নেফারটামের একটি রূপভেদ। ইনিও বাস্টেটের পুত্র। মেমফিসে নেফারটাম এবং ইমহোটেপের সাথে মাহেস একটি ত্রিত্বর অংশ ছিলেন। এই দেবতার প্রতিহিংসাপরায়ণ প্রকৃতির কারণে গ্রীকরা একে ফিউরিদের সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে দেখেছে।
মা’আত [Ma'at] - সত্য, ন্যায়বিচার এবং সম্প্রীতির দেবী। মিশরীয় প্যান্থিয়ন বা দেবগোষ্ঠীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দেবী। ইনিই আকাশে নক্ষত্রদের স্থাপন করেছিলেন এবং ঋতু নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। মা’আত (সম্প্রীতি) নামক বিশেষ নীতির ইনি মূর্তরূপ, যা প্রাচীন মিশরের সংস্কৃতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল। জীবনকালে মা’আত একজন মানুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটেন। মৃত্যুর পরে আত্মার বিচারকালে সত্যের পালক রূপে উপস্থিত থাকেন এবং শরকাঠির ক্ষেত্রে অবস্থিত স্বর্গে তার নিশ্চিত উপস্থিতি অব্যাহত থাকে। তাকে উটপাখির পালকের মুকুট পরা একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। শব্দটির অর্থ ‘যা সবসময় সোজা[স্ট্রেট]’। তার প্রচলিত সম্প্রীতির ধারণা একজন মিশরীয় মানুষের জীবনের প্রতিটি দিককে প্রভাবিত করত। মা’আতের মধ্যে অবস্থান করে থাকা অবস্থায় প্রতিটি কাজ এবং অস্তিত্বের দিকগুলির জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় রয়েছে। যাকে ঠিকঠাকভাবে উপযুক্ত সময়ে জেনেবুঝে নিয়ে সম্পাদন করতে হবে।
মাফডেট (মেফডেট) [Mafdet (Mefdet)] - ন্যায়বিচারের আদি দেবী, যিনি রায় ঘোষণা করেন এবং দ্রুত মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেন। তার নামের অর্থ ‘যে দৌড়ায়’। যা আসলে তার ন্যায়বিচারের গতিকে নির্দেশ করে। মিশরের প্রাচীনতম বিড়াল দেবতা। বাস্টেট এবং সেখমেট উভয়ের থেকেই প্রাচীন ইনি। করেছেন। মানুষকে বিষাক্ত যেকোনো কামড় থেকে রক্ষা করেন, বিশেষ করে কাঁকড়াবিছেদের হাত থেকে। ইনি সার্কেটেরও পূর্ববর্তী দেবী, যিনি পরে এই ভূমিকা নিয়েছিলেন। মাফডেটের সমস্ত গুণাবলী পরে অন্যান্য দেবীদের উপর আরোপিত হয়ে যায় এটা অনুমান করে নেওয়া যেতেই পারে। তা সত্বেও প্রারম্ভিক রাজবংশের সময়কাল (আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিষ্টপূর্ব) থেকে নতুন সাম্রাজ্যের (১৫৭০-১০৬৯ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কালে ইনি একজন জনপ্রিয় দেবী হিসাবেই বিবেচিত ছিলেন। যেখানে তার ভূমিকা ছিল মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বিচারক হিসাবে উপস্থিত থাকা। তাকে দড়ি এবং জল্লাদের কুঠার ধরে থাকা একটি বিড়াল, চিতা, চিতা বা লিংক্সের রূপে চিত্রিত করা হয়েছে।
মান্ডুলিস (মারুল বা মারওয়েল) [Mandulis (Marul or Merwel)] - নুবিয়ান সৌর দেবতা যাকে মিশরীয়রা নুবিয়ান সীমান্তের কাছে সুদূর উচ্চ মিশরে ফিলা এবং কালাবশাতে উপাসনা করত। ১৮তম রাজবংশের ( আনুঃ ১৫৫০-১২৯২ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়ে কালাবশায় তাঁর প্রথম মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল। তাকে রা এবং হোরাস উভয়ের সাথেই একত্রিত করে দেখা হত। তাকে হয় শিংওয়ালা মুকুট (হেমহেম মুকুট) পরা একটি বাজপাখি বা সাপের মুকুট পরা একজন মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। রা-এর সাথে তার সম্পর্কের সূত্রে ইনি একটি শিশু হিসাবে আবির্ভূত হন, যা আসলে সকালের সূর্যের প্রতীক। তার দিনের পরবর্তী সময়ের প্রতিনিধিত্বকারী হিসাবে তাকেই আবার একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানূষের রূপে দেখানো হয়েছে।
মাউ [Mau] - ঐশ্বরিক বিড়াল যে, কিছু পৌরাণিক গল্পে, রা-এর একটি রূপভেদ হিসাবে সৃষ্টির সূচনায় বা আদি ভোরে উপস্থিত ছিল। দুষ্ট সর্প অ্যাপেপের আক্রমণ থেকে মাউ জীবন বৃক্ষকে রক্ষা করেছিল। যা শাশ্বত জীবন এবং ঐশ্বরিক জ্ঞানের গোপনীয়তা ধারণ করেছিল। মাউ এবং গাছের গল্পটি মিশরীয় ‘বুক অফ দ্য ডেড’ এর ১৭ তম মন্ত্রে বলা হয়েছে। যার সূত্রে স্পষ্ট বোঝা যায় এই বিড়াল আসলে রায়ের মূর্ত রূপ। এই মন্ত্র আরও দাবি করে যে, এই সূত্রেই পৃথিবীতে বিড়ালের উৎপত্তি হয়।
মেহেন [Mehen] - সর্প দেবতা। যিনি অ্যাপেপের আক্রমণ থেকে সুর্য বজরার ভিতর থাকা রা-কে বাঁচাতে নিজের শরীর দিয়ে আবৃত করেছিলেন। প্রারম্ভিক পৌরাণিক কাহিনীতে দেখা যায় সেট যখন অ্যাপেপের সাথে লড়াই করছিলেন তখন মেহেন রা কে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন।
মেহেত-ওয়েরেট [Mehet-Weret] - একজন প্রাচীন আকাশ দেবী এবং মিশরের প্রাচীনতম দেবতাদের একজন। স্বর্গীয় গরু রূপী দেবী যিনি সময়ের শুরুতে সূর্য দেবতা রা-কে জন্ম দেওয়ার জন্য বিশৃঙ্খলার আদিম জল থেকে উঠে এসেছিলেন। তার নামের অর্থ ‘মহান বন্যা’। উর্বরতা এবং প্রাচুর্যের সাথে এর সম্পর্ক আছে। সূর্যের জন্ম দেওয়ার পরে, তিনি তাকে নিজের দুই শিংয়ের মধ্যে রেখে দিয়েছিলেন। প্রতিদিন সকালে তাকে আকাশে তুলে ধরতেন। তার গুণাবলী পরে হাথোরের চরিত্রে আরোপিত হয়।
মেহিট (মেহট) [Mehit (Meyht)] - আদি রাজবংশের যুগের (আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিষ্টপূর্ব) একজন চন্দ্র দেবী। যাকে দূরবর্তী দেবীর ধারণার সাথে সম্পর্ক যুক্ত করা হয়েছিল। একদা যিনি রা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে দূরে চলে যান এবং পরে সৃষ্টিতে রূপান্তর আনতে ফিরে আসেন। সাধারণত একটি হেলান দেওয়া সিংহী হিসাবে চিত্রিত করা হয় যার পিছন দিকে তিনটি লাঠি দেখতে পাওয়া যায়। আনহুরের সহধর্মিণী।
মেখিট [Mekhit] - সম্ভবত নুবিয়া থেকে আগত যুদ্ধের দেবী। একটি গর্জনকারী সিংহী হিসাবে চিত্রিত এবং চাঁদের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। ইনি রা-এর চোখের প্রতিহিংসামূলক দিকটির প্রতীক।একটি পৌরাণিক কাহিনীতে, রা-এর চোখ নুবিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয় যেখানে পৌঁছে চোখটি নিজেকে একটি সিংহীতে রূপান্তরিত করে। দেবতা অনুরিস এটিকে শিকার করেন এবং শরীরটা রা-কে ফিরিয়ে দেন। যেখানে এটি মেনহিতে পরিণত হয় (বা তার জন্ম দেয়)। যিনি তারপর অনুরিসের স্ত্রী হন। তাকে এবং অনুরিসকে সম্মান জানিয়ে অ্যাবিডোসের উপাসনা ক্ষেত্রে তার অর্চনা করা হত। মেনহিত, অনুরিস এবং দ্য আই অফ রা-এর গল্পটি অনেক দূরবর্তী কোনও দেবী মোটিফের এক উদাহরণ। যেখানে চোখ রা-কে ছেড়ে যায় এবং ফিরে আসে। বা বলা ভালো রূপান্তর বা পরিবর্তিত রূপ নিয়ে ফিরে আসে।
মেনহিত (মেনহিট) [Menhit (Menhyt)] - একজন সৌরদেবী যিনি সূর্য দেবতা রা-এর ভুরুর প্রতিনিধিত্ব করতেন। হেলান দেওয়া সিংহী হিসাবে চিত্রিত। বদ্বীপ অঞ্চলে পূজিত হতেন। একজন প্রতিরক্ষামূলক দেবী হিসাবে নিথ এবং ওয়াজেটের সাথে সম্পর্ক যুক্ত ছিলেন।
মেরেটসেগার [Meretseger] - থিবসে উপাসনা করা হত কোবরা সাপের আকারের এই রক্ষক দেবীর। ভ্যালি অফ কিংস এলাকায় এর বিশেষ দায়িত্ব ছিল নেক্রোপলিস রক্ষা করার।
মেরিট [Merit] - সঙ্গীতের দেবী যিনি বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে মহাজাগতিক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করেছিলেন। একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক দেবী যিনি শেষ পর্যন্ত সঙ্গীতের ক্ষেত্রে হাথোরের ছায়ায় হারিয়ে যান। হাথোরের সাথে বিশেষভাবে সিস্ট্রাম এবং সাধারণত সঙ্গীতের সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। কিন্তু, তারও আগে, মেরিট ছিলেন সেই দেবী যিনি সৃষ্টির সাথে শৃঙ্খলার সিম্ফনি বা মেলবন্ধন ‘পরিচালনা’ করেছিলেন।
মেসখেনেট [Meskhenet] - প্রসবের দেবী। মিশরের প্রাচীনতম দেবীদের একজন। মেসখেনেট মানুষের জন্মের সময় উপস্থিত থাকতেন, কা (আত্মার রূপায়ন) তৈরি করতেন এবং সেটাকে মানবদেহে শ্বাস রূপে প্রবেশ করাতেন। এটি করতে গিয়ে, তিনি নবজাতকের চরিত্রের মাধ্যমে তার ভাগ্যও প্রদান করতেন। একজন সান্ত্বনাদাত্রী হিসাবে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে আত্মার বিচারে উপস্থিত থাকতেন। অর্থাৎ জন্মের সময়, জীবনের গতিপথ নির্ধারণ এবং মৃত্যুর পরেও একজন মানুষের সাথে এই দেবী অবস্থান করতেন। তাকে একটি নারীর মাথা যুক্ত ‘বারথিং ব্রিক’ (পাথরের টুকরো যার উপর নারীরা প্রসবের সময় শুয়ে বা বসে থাকতেন) রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। অথবা ওই পাথরের টুকরো ধারণকারিণী বসে থাকা এক নারী রূপেও দেখানো হয়েছে। একজনের ভাগ্য প্রদানে তার এই ভূমিকা শেষ পর্যন্ত ‘সেভেন হাথোর’দের গুণ রূপে স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু মিশরের ইতিহাস জুড়ে এই দেবী সব গৃহেই পূজনীয়া রুপে স্থান পেয়েছিলেন।
মেস্টজেট [Mestjet] - রা-এর চোখের অনেক রূপভেদের মধ্যে একটি হিসাবে অ্যাবিডোসে পূজিত সিংহ-মাথাযুক্ত দেবী। নিঃসন্দেহে এই দেবী দূরবর্তী স্থানে অবস্থান করা দেবীর গল্পের চরিত্র ছিলেন। চিত্রিত ছিলেন। সাধারণত রা-এর চোখের সাথে যুক্ত দেবীদের এভাবেই উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে এর সম্বন্ধে আজ পর্যন্ত কোনও গল্প পাওয়া যায়নি। শুধুমাত্র অ্যাবিডোসের একটি শিলালেখ থেকে দেখা যাচ্ছে এই দেবী এক হাতে ‘আঁখ’ এবং অন্য হাতে একটি লাঠি নিয়ে এক নারী রূপে দাঁড়িয়ে আছেন। তার মেয়ে তার উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এগিয়ে আসছে।
মিন [Min] – প্রাক সাম্রাজ্য যুগের ( আনুঃ ৬০০-৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) একজন প্রাচীন উর্বরতার দেবতা। মিন ছিলেন পূর্ব মরুভূমির দেবতা যিনি ভ্রমণকারীদের উপর নজর রাখতেন। একই সাথে মিশরীয় ব-দ্বীপের কালো উর্বর কাদার সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক শিলালিপিগুলিতে তাকে আইসিসের স্বামী এবং হোরাসের পিতা হিসাবে দেখানো হয়েছে। সাথেই সম্পর্ক আছে ওসাইরিসের সাথেও। মিনকে একজন পুরুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যিনি এক হাতে তার উদ্ধত লিঙ্গ ধরে আছেন এবং অন্য হাতে আছে কর্তৃত্বের চিহ্ন বহনকারী দন্ড।
নেভিস (মার-ওয়ের বা নেম-ওয়ের) [Mnevis (Mer-Wer or Nem-Wer)] - হেলিওপোলিসের পবিত্র ষাঁড়। যাকে সূর্য দেবতা রা-এর একটি রূপভেদ হিসাবে বিবেচনা করা হত। দাগহীন কুচকুচে কালো চামড়ার আবরণের জন্য একদল জীবন্ত ষাঁড়ের দঙ্গল থেকে একে বেছে নেওয়া হয়েছিল। নিয়ম অনুসারে, যে কোনো সময়ে কেবলমাত্র একটাই নেভিস বিদ্যমান থাকতে পারে। একটি কোনও কারনে মারা গেলে তবেই দ্বিতীয় নেভিস খুঁজে নেওয়া হত। পর বর্তী সময়ে নেভিস অ্যাপিসের সাথে মিশে যান।
মন্টু [Montu] - বাজপাখিরূপী দেবতা। যিনি থিবসের ১১ তম রাজবংশের (আনুঃ ২০৬০-১৯৯১ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কালে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করেছিলেন। তার নাম ওই রাজবংশের তিনজন শাসকই নিজের সাথে জুড়ে নিয়েছিলেন। তাদের পরিচিতি ছিল মেন্টুহোটেপ (মন্টুহোটেপ) নামে। যার অর্থ "মন্টু খুশি হয়েছেন"। পরবর্তী সময়ে ইনি রা এর সাথে মিশে গিয়ে সূর্য দেবতা মন্ট-রা হিসাবে পরিচিত হন। এরসাথেই যুদ্ধের দেবতা হিসাবে হোরাসের সাথে তার সম্পর্ক তৈরি হয়। গ্রীকরা তাকে অ্যাপোলোর সাথে সমতুল্য মনে করত।
মাট [Mut] - আদি মাতৃদেবী। যিনি সম্ভবত প্রাক সাম্রাজ্য সময়কালে ( আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) তার ভূমিকা খুব একটা না থাকলেও, পরবর্তীতে আমুনের স্ত্রী, খোনসুর মা এবং থেবান ট্রায়াডের অংশ হিসাবে বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন। মাট, বাস্টেট এবং সেখমেটের সাথে সম্পর্ক যুক্ত রক্ষক দেবী হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। মানুষের জীবন রক্ষার দায়িত্ব ছিল তার উপর। ‘বুক অফ দ্য ডেড’-র ১৬৪ তম মন্ত্র অনুসারে, মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ‘ডেমন’দের কবলে পড়া আত্মার পরিত্রাতা হিসাবেও তাকে চিত্রিত করা হয়েছে। ইনি রাজা এবং রাষ্ট্রের ঐশ্বরিক রক্ষকও ছিলেন। যিনি ষড়যন্ত্রকারী এবং বিশ্বাসঘাতকদের তার তার জ্বলন্ত চুল্লিতে ‘রোস্ট’ করতেন।
N
নেবেথেটপেট [Nebethetpet] - হেলিওপোলিসের একজন দেবী, যাকে আতুমের হাতের মূর্তরূপ হিসাবে উপাসনা করা হয়। দেবতাদের সক্রিয়, মেয়েলি নীতির প্রতিভূ।
নেফারটাম (নেফেরতেম) [Nefertum (Nefertem)] - সুগন্ধি এবং মিষ্টি গন্ধের দেবতা। নেফারটামের জন্ম হয়েছিল সৃষ্টির ভোরে নীল পদ্ম ফুলের কুঁড়ি থেকে। যা মূলত আটুমের একটি রূপভেদ। তার নামের অর্থ "সুন্দর আটুম"। পরে তাকে তার একক দেবতা হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং তার সাথে মিষ্টি গন্ধযুক্ত ফুলের সাথে এর যোগসূত্রের সূচনা হয়। সূর্য দেবতা এবং ফুলের সাথে তার সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে পুনর্জন্ম এবং রূপান্তরের সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছেন। মিশরীয় ওষুধের ক্ষেত্রে তাকে রোগ নিরাময় সূচক সুগন্ধ বহন করে আনার জন্য আহ্বান করা হয়। ধূপের সাথে এই দেবতার সম্পর্ক আছে বলে মনে করা হয়।
নেহেবকাউ (নেহেবু-কাউ) [Nehebkau (Nehebu-Kau)] – ‘তিনি যিনি ‘কা’কে একত্রিত করেন’ শব্দটির অর্থ। একজন রক্ষক দেবতা যিনি জন্মের সময় দেহের সাথে কা (আত্মার রূপভেদ) যুক্ত করেন এবং মৃত্যুর পরে ‘কা’কে বা (আত্মার ডানাওয়ালা রুপভেদ ) এর সাথে সংযুক্ত করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তাকে একটি সাপ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে এবং হেকার মতো, ইনি সর্বদা বা সব সময়ে বিদ্যমান। সৃষ্টির ভোরে বা আদিকালে আটুম আদিম জলের বিশৃঙ্খলা থেকে উঠে এসে শৃঙ্খলা আরোপ করার আগে নেহেবকাউ সেখানে সাঁতার
নেহমেতয়ি [Nehmetawy] - একজন রক্ষক দেবী যার নামের অর্থ "তিনি যারা প্রয়োজনে আলিঙ্গন করেন"। তিনি হারমোপলিসে পূজিত হন যেখানে তাকে নেহেবকাউয়ের স্ত্রী হিসাবে বিবেচনা করা হত। অন্যান্য অঞ্চলে, তিনি জ্ঞান এবং লেখার দেবতা থথের সহধর্মিণী ছিলেন।
নিথ [Neith] - প্রাচীন মিশরের প্রাচীনতম এবং তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে স্থায়ী দেবতাদের মধ্যে একজন। প্রাক সাম্রাজ্য সময়কাল (আনুঃ ৬০০০ – ৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব ) থেকে টলেমাইক রাজবংশের (৩২৩-৩০ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কাল অবধি উপাসনা করা হয়েছে। রোম কর্তৃক মিশর দখল করার আগে টলেমাইক রাজবংশের হাতে ছিল শাসনের ক্ষমতা। নিথ ছিলেন একজন যুদ্ধের দেবী, সৃষ্টিকর্তা দেবী, মাতৃদেবী এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দেবী। তারসাথেই নীলনদের বদ্বীপে অবস্থিত সাইস শহরের পৃষ্ঠপোষক। মিশরের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসে নিম্ন মিশরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবী ছিলেন এবং সহস্রাব্দ ধরে দৈব উপাসনার জগতে একটি বিশিষ্ট অবস্থান বজায় রেখেছিলেন। সূচনা লগ্নের পাওয়া চিত্রে তাকে ধনুক এবং তীর সহ দেখা যায়। উল্লেখ্য তার উপাধিগুলির মধ্যে একটি ছিল ‘ধনুকের মালকিন’। একজন সৃষ্টিকর্তা দেবী হিসাবে তিনি সৃষ্টির আগে বিশৃঙ্খলার জল (নান) রূপে চিহ্নিত হয়েছিলেন।। এই ভূমিকা অনুসারে, তাকে "দেবতাদের ঠাকুরমা" বা "দেবতার মা" বলা হয়। জন্ম এই ব্যাপারটা এই দেবী আবিষ্কার করেছিলেন বলে মনে করা হত। জীবিত ও ক্রমবর্ধমান বস্তুআদির সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে বলেও বিশ্বাস করা হত। একজন মাতৃদেবী হিসাবে, তিনি দেবতাদের বিরোধের মধ্যস্থতাকারী। এ বিষয়ে তার খ্যাতি এক বিখ্যাত প্রশ্নর নিষ্পত্তি করার সূত্রে। দেবতাদের ‘ট্রাইব্যুনাল’ - যখন হোরাস নাকি সেট, কে মিশর শাসন করবে, এই প্রশ্নটির উত্তর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না, তখন উনিই এর উত্তর বলে দেন। মৃতদের উপর নজর রাখার সূত্রে ইনি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার দেবী হিসাবেও বিশিষ্টতা লাভ করেন। তুতানখামুনের সমাধিতে তার মূর্তি আইসিস, নেফথিস এবং সার্কেটের সাথে দেখা যায়। ডুয়ামুটেফের, হোরাসের চার পুত্রের একজন যিনি সমাধিতে ক্যানোপিক জারের দেখভাল করার , নজরদারি করার দায়িত্ব ছিল তার। ‘হল অফ ট্রুথ’-এ তাকে মৃতদের ন্যায়বিচারক হিসাবেও দেখতে পাওয়া যায়।।
নেখবেট [Nekhbet] - শকুনের আকারবিশিষ্ট একজন রক্ষক দেবী। যিনি উচ্চ মিশরকে রক্ষা করতেন। নিম্ন মিশরের রক্ষক ওয়াডজেটের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। এই দুজন কে একসাথে ‘দ্য টু লেডিজ’ সম্বোধন করা হতো।
নেখেনি [Nekheny] - বাজপাখির আকারের একজন রক্ষক দেবতা। যিনি প্রাক সাম্রাজ্য যুগে (আনু ৬০০০ -৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) নেখেন শহরের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার গুণাবলী শেষ পর্যন্ত হোরাসের চরিত্রে আরোপিত হয়।
নেপার [Neper]- শস্যের ঈশ্বর। ফসলের দেবী রেনেনুটেটের পুত্র। একে ভুট্টা রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। উর্বরতা দেবতা হিসাবে ওসাইরিসের সাথে ইনি সম্পর্ক যুক্ত ছিলেন। নেপার ওসাইরিসের পূর্ববর্তী দেবতা। বিখ্যাত ওসাইরিস পৌরাণিক কাহিনীর পূর্ববর্তী দেবতাদের মধ্যে একজন হতে পারেন যার সূত্রে এই কাহিনীর সূত্রপাত হয়েছিল। শবাধারের লেখনী দ্বিতীয়.৯৫ তাকে এমন এক দেবতা হিসাবে উল্লেখ করে যিনি ‘মৃত্যুর পর জীবিত’ হয়েছিলেন। শিলালিপিগুলির সুত্রে বোঝা যায় ওসাইরিসের জনপ্রিয়তার আগেই ইনি মৃত এবং পুনরুজ্জীবিত দেবতা বিষয়ক ভাবনার সুত্রপাত ঘটিয়েছিলেন।
নেফথিস [Nephthys] - অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কিত দেবী। পৃথিবী সৃষ্টির পরে গেব এবং নাটের সূত্রে জন্মগ্রহণকারী প্রথম পাঁচ দেবতার মধ্যে একজন। সেটের স্ত্রী, আইসিসের যমজ বোন এবং আনুবিসের মা। তার নামের অর্থ ‘মন্দিরের মালকিন’ বা ‘বাড়ির কত্রী’। এর ভিত্তিতে স্বর্গীয় বাসভবন বা মন্দিরকেও ইঙ্গিত করে। তাকে একজন নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে যার মাথার উপর বাড়ি বা ঘর রয়েছে। নেফথিসকে ব্যাপকভাবে এবং ভুলভাবেও, একজন গৌণ দেবতা হিসাবে গণ্য করা হয়। প্রকৃতপক্ষে তাকে মিশর শাসন করার প্রথম যুগ থেকে শেষ রাজবংশ পর্যন্ত মিশর জুড়ে পূজা করা হত। তাকে আইসিসের আলোর বিপরীতে অন্ধকারের দেবী হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়েছে। কিন্তু এই অন্ধকার কোনও নেতিবাচক অর্থ বহন করে না। এটা কেবলমাত্রই ভারসাম্য বজায় রাখা। নেফথিস ওসাইরিস পৌরাণিক কাহিনির নানা ক্ষেত্রে বিশিষ্ট ভূমিকার অধিকারিণী। ওসাইরিসকে প্রলুব্ধ করার জন্য নিজেকে আইসিসের রূপে রূপান্তরিত করেন। ওসাইরিসের দেহ কোথায় আছে সে বিষয়ে সেট এর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। আবার বোনকে সাহায্য করেন মৃত রাজাকে পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে। পরবর্তী জীবনে আত্মার যত্ন নেওয়ার জন্য ‘মৃতের বন্ধু’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় সময়কালে যে পেশাদার মানুষেরা শোকাহতদের দুঃখের প্রকাশ্য উপস্থাপনকে উত্সাহিত করত তারা ‘কাইটস অফ নেফথিস’ নামে পরিচিত ছিল। ‘দ্যা ল্যামেন্টেশন অফ আইসিস অ্যান্ড নেপথিস’ লেখনীতে এই দেবী ওসাইরিসের আত্মাকে মৃতদের জগত থেকে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এই অংশটি সারা মিশর জুড়ে নানান উত্সব, পরিষেবা এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়কালে নিয়মিত পাঠ করা হত।
নু (নুন) এবং নৌনেট [Nu (Nun) and Naunet] - নু আদিম বিশৃঙ্খলার মূর্ত রূপ যেখান থেকে পৃথিবী উদ্ভূত হয়েছিল। নৌনেট তার নারী রূপ এবং স্ত্রী। নুকে সাধারণত ‘দেবতাদের পিতা’ হিসাবে গণ্য করা হয়। সেক্ষেত্রে নৌনেটকে শুধুমাত্র ওগডোড, আট আদিম দেবতার গোষ্ঠী, চার পুরুষ চার নারী, যারা সৃষ্টির মূল উপাদানগুলির প্রতিনিধিত্ব করে, এর একটা অংশ বলে উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী কিছু পৌরাণিক কাহিনীতে, দেবী নিথ নুর সাথে সম্পর্কযুক্ত বলে দেখান হয়েছে।
নাট [Nut] – আদিম সময়ের আকাশ দেবী। যিনি স্বর্গের ছাউনি রূপে উপস্থাপিত হয়েছেন। গেবের (পৃথিবী) স্ত্রী, ওসাইরিস, আইসিস, সেট, নেপথিস এবং হোরাস দ্য এল্ডারের মা। সৃষ্টিতে বিশৃঙ্খলার জল থেকে আদিম ঢিবি উত্থিত হওয়ার পরে, আটুম (রা) তার সন্তান শু এবং টেফনাটকে পৃথিবী তৈরি করতে পাঠিয়েছিলেন। যখন তারা ফিরে এল, তখন তিনি এত খুশি হলেন যে, তার চোখ দিয়ে আনন্দের অশ্রু বের হয়ে এল। যা থেকে মানুষ সৃষ্টি হলো। এই নতুন প্রাণেদের বসবাসের কোন জায়গা ছিল না। তাই শু এবং টেফনাট মিলিত হয়ে গেব (পৃথিবী) এবং নাট (আকাশ) এর জন্ম দেন। তাদের সম্পর্ক এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিল যে, সেটা আটুমের পছন্দ হয়নি। উনি নাটকে গেবের উপরে ঠেলে উঠিয়ে উপরেই আটকে রেখে দেন। আদেশ জারি করেন, বছরের কোনো দিনে নাট সন্তান প্রসব করতে পারবেন না। জ্ঞানের দেবতা থথ, চাঁদের দেবতা ইয়ার সাথে জুয়া খেলেন এবং পাঁচ দিনের চাঁদের আলো জিতে নেন। সেটাকে বিশেষ দিনে রূপান্তরিত করেন। এরপর জুলাই মাসে টানা পাঁচ দিনে নাট তার পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিতে সক্ষম হন। যা আটুমের বাৎসরিক দিনের অংশ ছিল না। এই গল্পের অন্য সংস্করণে খোনসু থথের সাথে জুয়ায় হেরে গিয়েছিলেন।
O
ওগডড [Ogdoad] - সৃষ্টির আদিম উপাদানের প্রতিনিধিত্বকারী আট দেবতা: নু এবং নৌনেট (জল); হে এবং হউহেট (অসীম); কেক এবং কউকেট (অন্ধকার); আমুন এবং আমাউনেট (গোপনতা, অস্পষ্টতা)। মিশরীয় সংস্কৃতির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ভারসাম্যের ধারণা, যার সূত্রে মিশরীয় দেব-দেবী/বিশেষ সত্তা[স্পিরিট] দের অবস্থান ওগডোডের প্রতিনিধিরুপে প্রতিফলিত হয়েছিল।
অনুরিস (আনহুর) [Onuris (Anhur)] - তিনি যুদ্ধ এবং শিকারের দেবতা ছিলেন। নামের অর্থ ‘তিনি যিনি দূরবর্তী একজনকে ফিরিয়ে আনেন। যা নুবিয়া থেকে রা-এর চোখ পুনরুদ্ধারের গল্পের একটি উল্লেখ। এই গল্পে, রা-এর চোখ মিশর থেকে বেরিয়ে চলে যায় এবং নিজেকে সিংহে রূপান্তরিত করে। অনুরিস সিংহটিকে শিকার করে বা বন্দী করে নিয়ে আসে এবং রা-কে ফেরত দেয়। যেখানে সিংহটা দেবী মেখিটে রূপান্তরিত হয়। যিনি পরে তার স্ত্রীয়ের স্থান নেন। এই গল্পটি দূরবর্তী দেবী মোটিফের একটি উদাহরণ যেখানে রা-এর চোখ সূর্যদেব থেকে বিদায় নেয় এবং তারপরে ফিরে আসে (বা নিজেই ফিরে আসে) বা রূপান্তর নিয়ে আসে। অনুরিসকে রা-এর একজন পুত্র হিসাবে বিবেচনা করা হত। দেবতা শু এর সাথে এর সম্পর্ক আছে বলেই মনে হয়। মিশরীয় সেনাবাহিনীর পতাকায় তার চিত্র (আনহুর হিসাবে) প্রদর্শিত হয়েছিল, যখন তিনি তাদের যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, যুদ্ধে তাদের রক্ষা করেছিলেন এবং নিরাপদে নিজন জন্মস্থানে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিলেন। মিশরীয় সেনাবাহিনী এবং শিকারীদের পৃষ্ঠপোষক দেবতা।
ওসাইরিস [Osiris] - মৃতদের প্রভু এবং বিচারক। সৃষ্টির ভোরে নাটের দ্বারা জন্মলাভ করা প্রথম পাঁচ দেবতার একজন। মিশরের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং স্থায়ী দেবতাদের একজন। তার নামের অর্থ ‘শক্তিশালী’ বা ‘ক্ষমতাবান’। ওসাইরিস মূলত একজন উর্বরতার দেবতা ছিলেন, যিনি ‘ওসাইরিস মিথ’ এর মাধ্যমে জনপ্রিয়তা লাভ করেন। সমাজে তার প্রভাবে বেড়ে যায়। যে কাহিনিতে তিনি তার ভাই সেটের দ্বারা নিহত হন, তার স্ত্রী আইসিস, আকাশের দেবতা হোরাস তাকে জীবিত করেন। মৃতদের বিচারক হিসাবে যার নয়া অবস্থান হয় পাতালে। মিশরীয় ‘বুক অফ দ্য ডেড’-এ ওসাইরিসকে প্রায়শই ‘হল অফ ট্রুথ’ এর ন্যায় বিচারক হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। যিনি মৃতদের আত্মার হৃদয়কে মা’আতের সাদা পালকের বিপরীতে ওজন করেন। পৌরাণিক কাহিনীতে মৃত ও পুনরুজ্জীবিত ঈশ্বরের একটি প্রাথমিক উদাহরণ। যার রূপান্তর যীশু খ্রীষ্টের ধার্মিক কাহিনিতে আমরা দেখতে পাই।। মিশরীয় রাজারা নিজেদের মৃত্যুর সাথে ওসাইরিসের ঘটনাকে এক করে দেখেন। সাধারণত এই দেবতাকে একটি মমি (মৃত্যুর প্রতীক) এবং সবুজ বা কালো চামড়া (নীল নদ অঞ্চল এবং জীবনে উর্বরতার প্রতীক) হিসাবে চিত্রিত করা হয়। ইনি এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে, প্রাচীন মিশরের লোকেরা তার উপাসনা ক্ষেত্র আবিডোসের কাছে নিজেদের মৃতদেহ সমাহিত করার জন্য অর্থ প্রদান করতে পিছপা হতেন না। যারা সেতা পারতেন না তারা নিজেদের বা তাদের প্রিয়জনদের স্মারক অ্যাবিডোসে স্থাপনের জন্য অর্থ প্রদান করতেন। তারা বিশ্বাস করতেন যে, ওখানকার মাটির সাথে ওসাইরিসের সম্পর্ক আছে। এরকম কিছু করলে মৃত্যুর পর স্বর্গে সহজে প্রবেশ করা যাবে। তার ধর্ম পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রী আইসিসের ‘কাল্ট’ এর সাথে মিশে যায়। এই দেবতার কাহিনি দ্বারা পাপ থেকে পরিত্রাণ, শাশ্বত জীবন, মৃত ও পুনরুজ্জীবিত ঈশ্বর এবং কুমারী মায়ের সূত্রে ঐশ্বরিক পুত্রের জন্মের প্রতীক, যা পরবর্তীতে প্রাথমিক খ্রিস্টধর্মের বিকাশকে প্রভাবিত করেছিল।
ওসাইরিস-অ্যাপিস[Osiris-Apis] - পরম্পরাগতভাবে তাহ দেবতার সাথে সম্পর্ক যুক্ত অ্যাপিস নামক ষাঁড় পরে ওসাইরিসের সাথে যুক্ত হয়ে যায়। কারণ পরবর্তী দেবতা বেশী পরিমাণে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সাক্কারাতে, পুরোহিতরা এক সংকর দেবতার উপাসনা করতে শুরু করেছিল যাকে তারা নাম দিয়েছিল ওসাইরিস-অ্যাপিস। যিনি ছিলেন ষাঁড়ের রূপধারী দেবতা। ঐতিহ্যবাহী অ্যাপিস ষাঁড়ের মতো, একটি জীবন্ত ষাঁড়কে দেবতার অবতার হিসাবে বিবেচনা করা হত। যখন পবিত্র ষাঁড়টি মারা যেত তখন রাজার মতো একইরকম যত্ন নিয়ে তার মমি করা হয়।
P
পাখেট [Pakhet] – সিংহী রূপের একজন শিকারী দেবী। নামের অর্থ "তিনি যিনি আঁচড়ে দেন’ বা ‘চিরে দেন’। হোরাসের সহধর্মিণী। সেখমেটের প্রতিহিংসামূলক দিকের প্রতিভূ। আইসিসের ন্যায়বিচারের সাথেও এর সম্পর্ক ছিলেন। মনে করা হয় ইনি রাতে শিকার করে তার শত্রুদের আতঙ্কিত রাখতেন।
প্যানেবটই [Panebtawy] – শিশু দেবতা। রাজার প্রতিকৃতিধারী হোরাসের ঐশ্বরিক পুত্র রূপে চিত্রিত হয়েছেন। সাথেই একে শিশু হোরাস হিসাবেও দেখানো হয়েছে। একে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে থাকা একটি অল্প বয়স্ক ছেলে হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যা শিশু হোরাসের গ্রীক সংস্করণ হারপোক্রেটিস-এর পরবর্তী চিত্র নির্মাণে প্রভাবিত করেছিল। নামের অর্থ ‘দুই দেশের প্রভু’। হাথোরের রুপভেদ কম ওম্বোর স্থানীয় দেবী তাসেনেটনোফ্রেটের পুত্র।
পাটাইকোস [Pataikos] - ক্ষুদ্র তাবিজ ভিত্তিক দেবতার গোষ্ঠী, যারা দেবতা তাহের শক্তির প্রতিনিধিস্বরুপ। এদের বামন-দেবতা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল। এইসব তাবিজ সুরক্ষার জন্য পরিধান করা হত।
পিক [Peak] – ‘পশ্চিমের শিখর’ নামে পরিচিত। ভ্যালি অফ কিংসের উপর চাহড়া ফেলা পাহাড়চুড়াদের ভেতর সর্বোচ্চ শিখরের দৈবরূপ। দেইর এল-মেদিনার শ্রমিকরা প্রতিরক্ষামূলক শক্তি হিসাবে এর উপাসনা করত।
পিটিজ এবং পিহোর [Peteese and Pihor] – ‘কুপারের সন্তান’ নামে পরিচিত দুই ভাই, মানুষ, যারা ডেন্ডুরের কাছে নীল নদেতে ডুবে গিয়েছিল। নদীতে ডুবে গিয়েও মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার পর মনে করা হয় ওসাইরিসের সাথে তাদের সংযোগ আছে। এই সুত্রেই এরা সুরক্ষার স্থানীয় দেবতা হিসাবে স্বীকৃতি পায়। অগাস্টাস সিজার ডেন্ডুরে তাদের সম্মানে একটি মন্দির তৈরি করেছিলেন। যা এখন নিউ ইয়র্ক সিটির মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট-এ দেখতে পাওয়া যায়। মন্দিরের গায়ে থাকা খোদাই কাজে দেখতে পাওয়া যায় যে, ঈশ্বররূপী-ভাইয়েরা আইসিসকে কিছু উপহার দিচ্ছেন৷
তাহ [Ptah] - প্রাচীনতম মিশরীয় দেবতাদের মধ্যে একজন, যিনি প্রথম রাজবংশের যুগে (আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিষ্টপূর্ব) আবির্ভূত হন। তবে অনুমান করা হয় সম্ভবত প্রাক সাম্রাজ্য যুগেও (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়েও এর অস্তিত্ব ছিল। আনুমানিক ৩০০০ খ্রিষ্টপূর্ব সময়কালে তাহ ছিলেন মেমফিসের মেমফিস নগর সহ এবং এর আশেপাশের এলাকার প্রধান তথাপি মহান দেবতা। বিশ্বের স্রষ্টা, সত্যের অধিপতি। ইনিই সেই ব্যক্তিত্ব যিনি পৃথিবীর সৃষ্টির সময় বেন-বেনের আদিম ঢিবির উপর দাঁড়িয়েছিলেন। সম্ভবত প্রাথমিক উর্বরতার একজন দেবতা ছিলেন এবং মোরিঙ্গা গাছের সাথে এর সম্পর্ক ছিল। প্রাথমিক পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে,তাহ এই গাছের নীচে বিশ্রাম করতে পছন্দ করতেন। ভাস্কর এবং কারিগর সহ স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাতাদের পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিলেন। মনে করা হয়ে থাকে এই দেবতাই একজন ভাস্কর রূপে পৃথিবীকে রূপদান করেছিলেন। কখনো কখনো তার সৃজনশীল দিকের সূত্রে তাকে তাহ-নান বা তাহ-নৌনেট নামেও তাকে ডাকা হয়। এভাবেই তার সাথে ওগডোডের আদিম পদার্থের সাথেও একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। তাহকে একজন মমিতে পরিণত মানুষ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে, যার মাথায় নর করোটি এবং হাতে ‘আঁখ’ এবং ডিজেড চিহ্ন সম্বলিত শাসন দন্ড।
তাহ-হোটেপ [Ptah-hotep] - আরও একটি বিখ্যাত ‘উইজডম টেক্সট’ বা প্রজ্ঞা বিষয়ক পুস্তকের লেখক। যাকে তার মৃত্যুর পরে দেবতা হিসাবে মেনে নেওয়া হয়েছিল এবং তার নিজস্ব ভাবনার ধর্ম অনুসারে উপাসনা করা হত।
তাহ-সোকার-ওসাইরিস [Ptah-Sokar-Osiris] - একজন সংকর প্রজাতির দেবতা, যার সাথে সৃষ্টি, মৃত্যু এবং পুনর্জন্ম এই তিনটি বিষয়ের সম্পর্ক ছিল। মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্যের সময়কালে (২০৪০ – ১৭৮২ খ্রিষ্টপূর্ব) উপাসনা করা হতো।
Q
কেভেট [Qebhet] – কাবেচেট আর ইনি একই।
কেবেহসেনুয়েফ [Qebehsenuef] - একজন রক্ষক দেবতা। হোরাসের চার পুত্রের একজন, যার উপর অন্ত্রের ক্যানোপিক জারকে রক্ষা করার দায়িত্ব ছিল। পশ্চিমদিকের দেখভাল করার দায়িত্বো পালন করতেন। রূপ ছিল বাজপাখির। দেবী সার্কেট তাকে দিকে নজর রাখতেন।
কুদশু (কাদেশ) [Qudshu (Qadesh)] - সিরিয়ার প্রেমের দেবী। যুদ্ধের দেবতা রেশেপের সহধর্মিণী। নতুন সাম্রাজ্যের সময়কালে (১৫৭০-১০৬৯ খ্রিষ্টপূর্ব) মিশরীয় ধার্মিক উপাসনার অংশ হয়ে যান। যৌন এবং পবিত্র পরমানন্দের দেবী রূপে বিবেচিত হতেন। হাথোর, আনাত এবং আসতারতের সাথে তার সংযোগ ছিল। নামের অর্থ ‘পবিত্র’ এবং তাকে সর্বদা একজন মেদহীন সুঠাম দেহের অধিকারিণী নগ্ন নারী হিসেবে চিত্রিত করা হয়, যা মধ্যে কামুকতা এবং উর্বরতার প্রতীক। ডান হাতে পদ্মফুল এবং বাম হাতে সাপ বা প্যাপিরাসের ডালপালা। গোটা মিশর জুড়ে ব্যাপকভাবে সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তার ধর্মাচারণের রীতি কুদশু এবং রেশেপের মধ্যে পবিত্র বিবাহ পদ্ধতিকে পুনরুদ্ধার করেছিল। মেসোপটেমিয়াতে ইশতার/ইনানা এবং ফিনিসিয়ার আসতারতের সূত্রে এই রীতিপালনের একটা সম্পর্ক নিশ্চিত ছিল।
R
রা (আটুম বা রে) [Ra (Atum or Re)] - হেলিওপোলিসের মহান সূর্য দেবতা যার ধর্ম সারা মিশর জুড়ে ছড়িয়ে ছিল। পঞ্চম রাজবংশের সময়কালে ( ২৪৯৮-২৩৪৫ খ্রিস্টপূর্ব) সর্বাধিক জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। সর্বোচ্চ প্রভু এবং স্রষ্টা ঈশ্বর রূপে গিজার পিরামিডগুলির সাথে রা-এর একটা সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। যিনি জীবিত এবং মৃতদের জমির উপর শাসন করেন। ইনি দিনের বেলা আকাশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে সূর্যের বজরা চালিয়ে নিয়ে যান। আকাশ জুড়ে সূর্যের ক্রমাগত অগ্রগতির সাথে রা নিজের বিভিন্ন রুপের প্রকাশ করেন। তারপর সন্ধ্যায় পাতালের জগতে ডুব দেন। যেখানে বজরাটিকে আদিম সর্প অ্যাপেপ (অ্যাপোফিস) এর হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। এই বজরাকে রক্ষা করার জন্য অন্যান্য দেবতা এবং ন্যায্যভাবে মৃতদের আত্মারা বিশেষ ভুমিকা নেন। রা ছিলেন মিশরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় দেবতাদের মধ্যে একজন। এমনকি যখন দেবতা আমুনের প্রাধান্য বেড়ে গিয়েছিল, তখনও রা-এর জনপ্রিয়তা মোটেই কম ছিল না। আমুনের সাথে তিনি এরপর একীভূত হয়ে যান, পরিণত হন আমুন-রা নামক সর্বোচ্চ দেবতায়।
রায়েত্বয়ে (রায়েত বা রায়েত- ত্বয়) [Raettawy (Raet or Raet-Tawy)] - রা-এর নারী রূপভেদ। হাথোরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাকে হাথোরের মতোই মাথায় ইউরায়াসের সাথে সৌর চাকতি সহ একইভাবে চিত্রিত করা হয়েছে। কখনও কখনও চাকতিটির উপরে দুটি পালক দেখতে পাওয়া যায়।
রা-হারাখতে (রাহারাক্তি বা রা-হারাখতি) [Ra-Harakhte (Raharakty or Ra-Harakhty] - রা এবং হোরাসের মিলিত রূপ। বাজপাখিরূপী দেবতা। সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্তে দিগন্তে দুরকম সূর্যর মূর্ত রুপ। 'হারাখতে' মানে ‘দিগন্তের হোরাস’। সৌর চাকতির মুকুট পরা একজন বাজপাখির মাথাওয়ালা মানুষ রূপে তাকে চিত্রিত করা হয়েছে।
রেনপেট [Renpet] - একজন দেবী যিনি ‘বছর’ এর প্রতিভূস্বরূপা। শিলালিপির লেখনীতে তাকে খাঁজযুক্ত পামগাছের শাখা রূপে উপস্থাপিত করা হয়েছে। যা আসলে সময় অতিবাহিত করার ইঙ্গিত দেয়। এটি 'বছর'-এর হিয়েরোগ্লিফ চিত্র। তার কোন আনুষ্ঠানিক ধর্ম বা মন্দির ছিল না কিন্তু মিশরীয়দের সময় বোঝা বা অনুমান করার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে তিনি বর্তমান ছিলেন। যার [সময়] অন্য সব কিছুর মতো ব্যক্তিত্ব এবং জীবনীশক্তি আছে এরকমটাই ভাবা হত।
রেনেনুটেট (রেনেনেট বা এরনুনেট) [Renenutet (Renenet or Ernutet)] - অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক দেবী যাকে একটি কোবরা সাপ বা মানব নারীর মাথা সহ একটি কোবরা সাপ রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। নামের অর্থ ‘সেই সাপ সে লালনপালন করে"। ইনি ছিলেন শুশ্রূষা ও শিশু লালনপালনের দেবী। সময়ের সাথে সাথে, সন্তানের জন্ম এবং ভাগ্যের দেবী মেসখেনেটের সাথে তার ঘনিষ্ঠ একত্রীকরণ হওয়া শুরু হয়। এমনকি একজন ব্যক্তি মানুষেরর জীবনের দৈর্ঘ্য কতটা হবে এবং তাদের সাথে ঘটবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলি নির্ধারণের জন্যও তাকে কাজ করতে দেখা যায়। মেসখেনেটের সাথেই তাকে নিথের সাথেও যুক্ত ছিলেন বলে মনে করা হয়। কখনও কখনও তাকে ওসাইরিসের মা হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। আইসিসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত করে তাকে ওসাইরিসের স্ত্রী এবং আতুমের স্ত্রী রূপে তাকে হোরাসের মা হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে একে ‘লেডি অফ জাস্টিফিকেশন’ হিসাবে পাওয়া যায়। যার সূত্রে ইনি দেবী মা’আতের সাথেও এর সম্পর্ক তৈরি হয়। মৃত্যু পর বর্তী সময়ে রাজারা যে পোশাক পরিধান করতেন তা রক্ষা করার জন্য দায়িত্ব ছিল এই দেবীর। এই সূত্রে তিনি ‘লেডি অফ দ্য রোবস’ নামেও পরিচিত ছিলেন। এই দায়িত্বে থাকা অবস্থায়, উনি এক আগুনে নিঃশ্বাস ফেলা কোবরা সাপ হিসাবে আবির্ভূত হতেন, যিনি রাজার শত্রুদের দূরে রাখতেন। ‘লেডি অফ দ্যা ফারটাইল ফিল্ডস’ এবং ‘লেডি অফ দ্যা গ্রানারি’ নামেও পরিচিত শস্যর দেবী ছিলেন এই রেনেনুটেট। যিনি ফসল রক্ষার দায়িত্ব পালন করতেন। তাকে শস্যের দেবতা নেপ্রির মা হিসাবেও দেখানো হয়েছে। উর্বরতার দেবী হিসাবে, ইনি নীল নদের প্লাবনের সাথে যুক্ত ছিলেন। ফলে তাই নীল নদের উর্বর কাদার দেবতা হাপির সাথেও তার সংযোগ সূত্র ছিল ধরে নেওয়া যেতেই পারে।
রেরেট [Reret] - একটি জলহস্তীর আকারের এক রক্ষক দেবী। যার নামের অর্থ ‘বপন’। ড্র্যাকো নক্ষত্রমণ্ডলীর প্রতিনিধি ছিলেন। পাতাল পথে যাত্রা করার সময় সূর্য বজরার রক্ষাকারিণী দেবী। নক্ষত্রমণ্ডলীর সুত্রে, ইনি কখনও কখনও রেরেট-ওয়ারেট (‘দ্য গ্রেট সো’ বা মহান বপনকারিণী) নামেও পরিচিত ছিলেন। তাকে দিগন্তের কত্রী হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সুপরিচিত জলহস্তীরূপিণী দেবী টাওরেট এবং আকাশের দেবী এবং প্রতিরক্ষামূলক শক্তি হিসাবে হাথোর এবং নাটের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল ধরে নেওয়াই যায়।
রেসেপ [Reshep] - সিরিয়ার যুদ্ধ দেবতা। যিনি নতুন সাম্রাজ্যের সময়কালে (১৫৭০-১০৬৯ খ্রিষ্টপূর্ব) মিশরীয় উপাসনা পদ্ধতিতে মিশে গিয়েছিলেন। যৌন আনন্দ এবং পবিত্র পরমানন্দের দেবী কুদশু (কাদেশ) এর সহধর্মিণী ছিলেন। এদের সাথে উর্বরতা দেবতা মিনকে যূক্ত করে এক ত্রিত্ব শক্তি রূপে উপাসনা করার চল ছিল। দ্বারা মেসোপটেমিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত থাকা ইনানা/ইশতারের ধার্মিক প্রথার সাথে যুক্ত করে কুদশু এবং রেশেপের অনুগামীরা এদের ভিতর বিবাহের এক আচারপ্রথার পুনরায় প্রচলন শুরু করেন। মেসোপটেমিয়ার যুদ্ধ দেবতা নারগালের সাথে মূর্তিগত দিক থেকে রেসেপের যথেষ্ট মিল পাওয়া যায়। মহামারীর দেবতা হিসাবে, ইনি বিশৃঙ্খলা এবং শুষ্ক বর্জ্যের দেবতা সেটের সাথেও সম্পর্ক যুক্ত ছিলেন। রেসেপকে একজন অসাধারণ শক্তিশালী যোদ্ধা হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যিনি উঁচিয়ে ধরে আছেন যুদ্ধের গদা বা মুগুর। পরনে স্কার্ট এবং মুখে লম্বা মেসোপটেমিয়ান-ধরণের দাড়ি।
রুটি/রাটি [Ruty] - যমজ সিংহ দেবতা। যারা পূর্ব এবং পশ্চিম দিগন্তের প্রতিনিধিত্ব করতেন। নামের অর্থ ‘এক জোড়া সিংহ’। এরা মূলত শু এবং টেফনাটের সাথে আকাশের দেবতা হিসাবে যুক্ত ছিলেন এবং পরবর্তী সময়ে রা এবং সূর্য বজরার সাথে বিশেষ সম্পর্কে যুক্ত হয়ে গিয়েছিলেন।
S
সাহ [Sah] - নক্ষত্র জগতের দেবতা। অরিয়ন নক্ষত্র মণ্ডলীর মূর্ত রূপ। সাধারণত ওসাইরিস এবং আইসিসের ঐশ্বরিক রূপের উপস্থাপনা হিসাবে সোথিস (সোপডেট) এর সাথে যুক্ত করে একসাথে দেখান হয়। পিরামিড লেখনী অনুসারে, তাকে ‘দেবতাদের পিতা’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ দিকের সাথেও তার যোগ আছে। যেখানে ইনি রাজাকে পরকালে স্বাগত জানাতেন। ‘ওরিয়নে বসবাসকারী’ হিসাবেও পরিচিত। পিরামিড লেখনীর ১৮৬ তম অধ্যায়ে ইনি আত্মাকে স্বাগত জানায়, ‘ওরিয়নের বাসিন্দার নামে, আকাশে এক ঋতু এবং পৃথিবীর এক ঋতুর সহযোগে'। এই বাক্য বন্ধ অনুসারে ধরে নেওয়া যায়, পৃথিবীতে একটি ঋতু [সম্ভাব্য জীবনকাল] উপভোগ করার পর এবার আকাশেও সেই সূযোগ মিলবে। এই দেবতাকে তারায় ভরা রাতের আকাশে নৌকার উপর দাঁড়িয়ে থাকা ‘আঁখ’ এবং রাজদণ্ড ধারণ করা একজন ব্যক্তি হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
স্যাটিস (সাটেট বা সাটিট) [Satis (Satet or Satit)] - নুবিয়ার ও মিশরের দক্ষিণ সীমান্ত অঞ্চলের দেবী। আসওয়ান অঞ্চলে এলিফ্যান্টাইনের সাথে যোগসুত্র আছে। তার নাম প্রথম পাওয়া যায় সাক্কারায় জোসারের স্টেপ পিরামিডের (আনুমানিক ২৬৭০ খ্রিষ্টপূর্ব) নীচের কক্ষের ভিতরে পাথরের পাত্রের গায়ে। তাঁকে মিশরের প্রাক সাম্রাজ্য যুগের (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিষ্টপূর্ব) একজন প্রাচীন দেবী বলে মনে করা হয়। কখনও কখনও তাকে এলিফ্যান্টাইনে, যেখানে মিশরীয়দের বিশ্বাস অনুযায়ী এই নদীর উৎপত্তি হয়েছে, নীল নদের দেবতা খনুমের সহধর্মিণী হিসাবেও দেখা যায়। কিছু গল্পে রা-য়ের চোখ এবং দূরবর্তী দেবী মোটিফের সাথে যুক্ত, যেখানে ইনি বিশেষ রূপান্তর ঘটাতে অনেক দূর থেকে ফিরে আসেন। এই ক্ষমতা অনুসারে, ইনি নীল নদের প্লাবনের সাথেও যুক্ত। আবার ইনি সিরিয়াস তারকার মূর্ত রূপ সোথিস (সোপডেট) এর সাথেও যুক্ত। রাতের আকাশে যার আবির্ভাব প্লাবনের সূচনা করত। তাকে হরিণের শিং সহ উচ্চ মিশরের সাদা মুকুট পরা একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
সেবিউমেকার [Sebiumeker] - একজন অভিভাবক দেবতা, যিনি বংশবৃদ্ধি ও উর্বরতার দেবতা হিসেবে কুশের মেরোতে প্রধান দেবতা রূপে বিবেচিত ছিলেন। সেবিউমেকার একজন সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বর হিসেবে আটুমের সাথে যুক্ত এবং সম্ভবত আধুনিক সুদান নামে পরিচিত অঞ্চলের সর্বোচ্চ দেবতা ছিলেন। প্রায়শই দরজার কাছে ‘ট্যাবো’ নামক অন্য এক দেবতার সাথে তার মূর্তি দেখতে পাওয়া যায়। এর থেকেই অনুমান করা হয় যে, তিনি একজন অভিভাবক দেবতা ছিলেন। তবে এটা ঠিক নাও হতে পারে। হয়তো দরজার কাছে তার মূর্তি স্থাপনের সাথে রূপান্তরের কিছু সম্পর্ক ছিল। হয়তো প্রবেশ মুহূর্তে তাকে স্পর্শ করার অন্য কিছু অর্থ ছিল সেই সময়ে।
সেড [Sed] - প্রাচীন শেয়াল দেবতা। পঞ্চম রাজবংশের সময়কালের (২৪৯৮-২৩৪৫ খ্রিষ্টপূর্ব) পালের্মো স্টোন-এ এই দেবতার নাম প্রথম দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু যিনি সম্ভবত এর চেয়ে অনেক বেশি প্রাচীন সময়ের দেবতা ছিলেন। ইনি ছিলেন স্বতন্ত্র রাজা এবং রাজত্বের রক্ষক। একজন রাজার শাসনের প্রতি ত্রিশ বছর অন্তর একবার করে এই দেবতাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য অনুষ্ঠিত হতো সেড ফেস্টিভ্যাল (হেব-সেড ফেস্টিভ্যাল নামেও পরিচিত)। এই অনুষ্ঠানের মূল হোতা এই সেড নামক দেবতা। পরবর্তী সময়ে তার গুণাবলী ‘ওয়েপওয়াপেট’এর উপর আরোপিত হয়। বা এটাও হতে পারে যে ‘ওয়েপওয়াপেট’ (যার নামের অর্থ ‘নতুন পথের দিশারি’) সেডের অন্য একটা রূপের উপাখ্যান যা বেশি জনপ্রিয় হয়েছিল। ঈশ্বর রূপে বিবেচিত রাজার রক্ষক হিসাবে, সেড ন্যায়বিচারের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং এই কারণেই তাকে দেবী মা’আতের সাথেও সম্পর্ক যুক্ত বলে মনে করা হয়।
সেফখেত-অ্যাবি (সাফেখ-আউবি) [Sefkhet-Abwy (Safekh-Aubi)] – এর বিষয়ে আলোচনা রইল শেস্যাতের আলোচনায়।
সেখমেট [Sekhmet] - প্রাচীন মিশরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য দেবী। সেখমেট ছিলেন একজন ‘লিওনিন’ সিংহ সমা ‘দেবী’ যাকে সাধারণত সিংহের মাথাওয়ালা একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হত। নামের অর্থ ‘শক্তিশালী’। এই সুত্রে তাকে ‘একজন শক্তিশালী নারী’ হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়। ইনি ছিলেন ধ্বংস ও নিরাময়, মরুভূমির বাতাস এবং শীতল বাতাসের দেবী। রা-এর কন্যা এই দেবী রায়ের চোখ/দূরবর্তী দেবী মোটিফের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গল্পগুলির মধ্যে একটিতে উপস্থিত আছেন। রা যখন মানুষদের পাপাচরণ দেখে তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েন, তখন তিনি সেখমেটকে তাদের ধ্বংস করতে পাঠান। অন্যান্য দেবতারা রা-কে সেখমেটকে থামানোর জন্য অনুরোধ করেন তা না হলে মানবজাতি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাবে। রা-এর কাছে রক্তলাল রঙের উত্তেজক পানীয় বা বিয়ারের একটি পাত্র ছিল। উনি সেটাকে ডেনডেরাতে রেখে দেন। সেখমেট সেটা পান করে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। যখন জেগে উঠেন তখন রূপান্তরিত হন পরোপকারী হাথোরে। সেখমেট অবশ্য তার ‘লিওনিন’ রূপেই বর্তমান থাকেন। নিজস্ব ধ্বংস ও প্রতিশোধের ক্ষমতার জন্য সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষক দেবী হিসাবে তার উপাসনা করা হত। এই বিষয়ে ‘নুবিয়ানদের আক্রমণ কারিণী’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আনয়নকারিণী বলেও তাকে উল্লেখ করা হয়েছে। প্লেগ রোগ ‘সেখমেটের বার্তাবাহক’ বা ‘সেখমেতের জল্লাদ’ নামে পরিচিত ছিল। যেভাবে উনি মরুভূমির বাতাস বয়ে আনতে পারতেন, ঠিক সেভাবেই সে বাতাসকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতাও তার ছিল। একই কথা মহামারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তিনি যেমন প্লেগ আনয়ন করতেন, তেমনই নিরাময় করতেও সহায়তা করতেন। এই ক্ষমতার জন্য ‘জীবনের মালকিন’ হিসাবেও পরিচিত ছিলেন (এরজন্যই প্রাচীন চিকিত্সকরা প্রায়শই নিরাময়ের মন্ত্রে তাকে আমন্ত্রণ জানাতেন)। অন্যান্য ‘লিওনিন’ দেবতা, যেমন বাস্টেট এবং পাখেতের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন। সাথেই তাকে দেবী মাতের আক্রমনাত্মক, হিংস্র রূপভেদ বলে মনে করা হয়।
সেপা [Sepa]- গাধার মাথা বা শিং সহ একটি ‘সেন্টিপিড’ বা কেন্নো অবয়বের রক্ষক দেবতা। যার পরিচিতি ছিল ‘হোরাসের সেন্টিপিড’ নামে। সাপের কামড় থেকে রক্ষাকারী একজন দেবতা হিসাবে তার উপাসনা করা হত। প্রাক সাম্রাজ্য সময়কালে (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) সেপার অন্য কিছু রূপের উপাসনাও হত। হেলিওপোলিসে তার নিজস্ব মন্দির ছিল। যেখানে ইনি মমিভূত আকারে ওসাইরিসের সাথে সম্পর্ক যুক্ত ছিলেন। যা মৃত্যু পরবর্তী জীবনে তার প্রতিরক্ষামূলক ক্ষমতার প্রতীক ছিল।
সেরাপিস [Serapis] – মিশরের টলেমাইক রাজবংশের (৩২৩-৩০ খ্রিষ্টপূর্ব), মিশর রোমান শাসনের অধীনে যাওয়ার আগের শেষ রাজবংশ, প্রথম শাসক প্রথম টলেমি সোটার (আনুঃ ৩২৩-২৮৩ খ্রিষ্টপূর্ব) দ্বারা সৃষ্ট হাইব্রিড দেবতা। ওসাইরিস এবং অ্যাপিসের মিশ্রণ এই সেরাপিস। তার চরিত্রে এই দুই মিশরীয় দেবতার গুণাবলীর সংমিশ্রণ তো ছিলই। যার সাথে মিশে গিয়েছিল গ্রীক দেবতা জিউস, হেলিওস, ডিয়োনিসিয়াস, হেডিস এবং অ্যাসক্লেপিয়াসের গুণাবলী। আলেকজান্দ্রিয়ার লাইব্রেরির কাছে অবস্থিত বিখ্যাত সেরাপিয়ামে সর্বোচ্চ দেবতা ছিলেন ইনি। প্রথম টলেমিও তার প্রয়াত কমান্ডার এবং রোল মডেল আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট যে ধরনের বহু-সাংস্কৃতিক সমাজ তৈরি করতে চেয়েছিলেন তার মতোই কিছু একটা করতে চেয়েছিলেন। যাতে সেরাপিস ছিলেন এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রথম টলেমি যে ধরনের সমাজের কথা ভেবেছিলেন তাকে উৎসাহিত উদ্দীপিত করার জন্য উপযুক্ত ছিল সেরাপিস রূপী মিশরীয় এবং গ্রীক আদর্শের এক মিশ্র দেবতা।
সেরেট [Seret] - সম্ভবত লিবিয়া থেকে আসা এক ‘লিওনিন’ বা সিংহ সমা প্রতিরক্ষামূলক দেবী। এর উল্লেখ শুধুমাত্র পঞ্চম রাজবংশের (২৪৯৮-২৩৪৫ খ্রিষ্টপূর্ব) সময়কালের শিলালিপিতে করা হয়েছে। যেখানে মূলত লিবিয়ানরা বসবাস করত মিশরের একটি অঞ্চলের দেবী হিসেবে – যা ছিল তৃতীয় নিম্ন মিশর নোম (প্রদেশ)। অন্যান্য লিওনিন দেবীদের মতোই, তিনি তার অনুসারীদের জন্য ভয়ানক প্রকৃতির রক্ষক এবং তাদের প্রতি করা অন্যায়ের প্রতিশোধ নিতেন।
সার্কেট (সেলকেট, সের্কেট বা সার্কিস) [(Selket, Serqet or Serkis)] - একজন প্রতিরক্ষামূলক এবং গুরুত্বপূর্ণ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া বিষয়ক দেবী। সম্ভবত প্রাক সাম্রাজ্য যুগে ( আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) সময়ে এর আবির্ভাব হয়েছিল। মিশরের প্রথম রাজবংশের সময় (আনুঃ ৩১৫০-২৮৯০ খ্রিস্টপূর্ব) সময়ে প্রথম এর উল্লেখ পাওয়া যায়। . তুতানখামুনের সমাধিতে পাওয়া তার সোনার মূর্তি সূত্রে এই দেবী সবচেয়ে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। সার্কেট একজন বৃশ্চিক দেবী। কাঁকড়াবিছের মাথাওয়ালা প্রতিরক্ষামূলক ভঙ্গিতে বাহু প্রসারিত করা একটি নারী হিসাবে চিত্রিত হয়েছেন এই দেবী। হয়তো একজন আদি মাতৃদেবী ছিলেন, যিনি এমন এক দেবীতে বদলে যান যিনি মানুষকে (বিশেষ করে শিশুদের) বিছের বিষ থেকে রক্ষা করতেন এবং পরে সমস্ত রকম বিষ থেক্মি রক্ষা করার দেবী হয়ে যান। ‘আইসিস অ্যান্ড দ্য সেভেন স্কর্পিয়ানস’ নামে পরিচিত একটি গল্পে বলা হয়েছে যে, আইসিস একবার এক ধনী মহিলার দ্বারা অপমানিত হয়েছিলেন। সার্কেট, তার সাতটি বিছেকে আইসিসের দেহরক্ষী হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। সার্কেট, তাদের একজনকে মহিলার ছেলেকে দংশন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ছেলেটি বিষের প্রভাবে মারা যাচ্ছিল কিন্তু আইসিস তাকে বাঁচিয়ে দেন এবং মহিলাটিকে ক্ষমা করে দেন। এর পর থেকে, সার্কেট আইসিসের ক্ষমার উদাহরণ অনুসরণ করেন এবং অন্যান্য শিশুদের বিছের কামড় থেকে রক্ষার দায়িত্ব নেন। তার পুরোহিতরা মূলত চিকিত্সক ছিলেন যারা নিরাময়ের জন্য তার নাম ব্যবহার করতেন। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ইনি মৃতদের আত্মাকে স্বর্গে যেতে সাহায্য করতেন ছিলেন এবং ভ্রমণের একটি নির্দিষ্ট বিপজ্জনক অংশ থেকে তাদেরকে রক্ষাও করতেন। আইসিস, নিথ এবং নেফথিসের সাথে, ইনিও হোরাসের চার পুত্রের উপর নজর রাখতেন, যখন ওই চারজন সমাধিক্ষেত্রের ভিতর মৃতদের নানান অঙ্গ পাহারা দিত।
শেস্যাট (সেফখেট-অ্যাবি বা সাফেখ-আউবি) [Seshat (Sefkhet-Abwy or Safekh-Aubi)] - লেখালিখি, বইপত্র, স্বরলিপি এবং পরিমাপের দেবী। নামের অর্থ ‘দ্য ফিমেল স্ক্রাইব বা ‘সেই নারী যে লেখে’। জ্ঞান ও লেখার দেবতা থথের সহধর্মিণী (যদিও কখনও কখনও তাকে তার কন্যা হিসাবে চিত্রিত করা হয়)। সরকারী এবং ব্যাক্তিগত উভয়রকম গ্রন্থাগারের পৃষ্ঠপোষক। ‘শী হু ইজ ফরমোস্ট ইন হাউস অফ বুকস’ নামেও পরিচিত ছিলেন। লেখকদের পৃষ্ঠপোষক দেবীও ছিলেন। পরিমাপের দেবী হিসাবে ইনি মন্দির ও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণে রাজাকে সঠিক পরিমাপ নিতে সাহায্য করতেন। আচার-অনুষ্ঠানের নানান পরিমাপেও তাকে সহায়তা করতেন। দ্বিতীয় রাজবংশর (আনুমানিক ২৮৯০-২৬৭০ খ্রিস্টপূর্ব) সময়কালে তিনি রাজা খাসেকেমউইকে এই বিষয়ে সাহায্য করেছিলেন বলে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে। পরিমাপের সাথে তার যোগসূত্র শেষ পর্যন্ত তাকে নির্মাতা, স্থপতি এবং যারা গবাদি পশু, অন্যান্য প্রাণী এবং যুদ্ধে আটক বন্দীদের জন্য হিসাব নিকাশ করতেন তাদের পৃষ্ঠপোষক হিসাবেও পরিচিত করে তোলে। যদিও তার নিজের কোনো মন্দির ছিল না, কিন্তু আরএইচ উইলকিনসনের মত অনুসারে, ‘ভিত্তিস্থাপন অনুষ্ঠানে বিশেষ ভূমিকার কারণে ইনি প্রতিটি মন্দির ভবনের অংশ ছিলেন। আলখাল্লার উপরে চিতাবাঘের চামড়া, মাথায় হেডব্যান্ড পরা এক তারা লাগানো দন্ড সহ তাকে চিত্রিত করা হয়েছে। ডান হাতে ধরে লেখার সরঞ্জাম এবং বাম হাতে বছর পেরিয়ে যাওয়ার প্রতিনিধিত্বকারী খাঁজযুক্ত তালগাছের ডাঁটা ধরে আছেন।
সেট (সেঠ) [Set (Seth)] - যুদ্ধ, বিশৃঙ্খলা, ঝড় এবং মহামারীর দেবতা। নামের অর্থ ‘বিভ্রান্তি উদ্দীপক’ এবং ‘ধ্বংসকারী’। যার গবাদি পশুর মতো খুর এবং কাঁটাযুক্ত লেজওয়ালা এক লাল রঙের প্রাণী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। যা খ্রিস্টান ধর্মের ডেভিলের পরবর্তী সময়কালের আইকনোগ্রাফির নমুনা বলা যেতেই পারে। সেট মূলত একজন নায়ক-দেবতা ছিলেন যিনি অ্যাপেপ (অ্যাপোফিস) নামক মহা-সর্পকে সূর্য দেবতার বজরায় আক্রমণ করা থেকে আটকেছিলেন এবং রাতেই হত্যা করেছিলেন। ইনি মরুভূমির সেই দেবতা যিনি শুষ্ক ভূমির মন্দ বাতাসকে নীল নদের উর্বর উপত্যকায় নিয়ে এসেছিলেন। এর সাথে বিদেশী ভূমি ও মানুষের সাথে যুক্ত ছিলেন। তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন আনাট এবং আসটারটে, উভয়ই যুদ্ধের সাথে যুক্ত দেবী এবং উভয়েই বিদেশী। আর ছিলেন তাওয়েরেট, সন্তানের জন্ম এবং উর্বরতার প্রতিরক্ষামূলক দেবী। সেটকে প্রায় সবসময় ‘মন্দ’ হিসাবেই দেখানো হয়েছে, ফলে অনেক মন্দ গুণাবলী তার চরিত্র আরোপ করা হয়েছিল। তবে প্রাচীন মিশরীয়রা তাকে সেই অর্থে মন্দ বা অন্ধকারের মূর্ত প্রতীক হিসাবে বিবেচিত করেনি। বরং তাকে ওসাইরিস এবং হোরাসের মতো দেবতাদের জন্য, যারা সবরকম মহৎ এবং ভালো, উর্বরতা, জীবনীশক্তি এবং অনন্তকালের সমস্ত কিছুর প্রতিনিধিত্ব করতেন, প্রয়োজনীয় ভারসাম্য হিসাবে দেখানো হয়েছিল। ওসাইরিসের মিথে সেট বিশ্বের প্রথম খুনি হিসেবে পরিচিত। যেখানে সে সিংহাসন দখল করার জন্য তার ভাইকে হত্যা করে। আইসিস ওসাইরিসকে জীবিত করে তলেন, কিন্তু, অসম্পূর্ণতার কারণে এরপর উনি মৃতদের প্রভু হিসাবে পাতালে নেমে যেতে বাধ্য হন। আইসিস ওসাইরিসের পুত্র হোরাসকে জন্ম দেন। যে পৈত্রিক সিংহাসন ফিরে পাওয়ার জন্য বড় হয়ে উঠে। সেট আর হোরাসের যুদ্ধ, যা আশি বছর ধরে চলেছিল। ‘দ্য কনটেন্ডিংস অফ হোরাস অ্যান্ড সেট’ গ্রন্থে এর বর্ণনা করা হয়েছে। যা একটি সংস্করণে আইসিসের হস্তক্ষেপে সম্পন্ন হয়েছিল। অন্য আরেক সংস্করণেতে এই কাজ করেন নিথ। হোরাসকে সাথে বৈধ রাজা ঘোষণা করা হয় এবং সেটকে মরুভূমিতে নির্বাসিত করা হয়।
সেয়(সাই) [Shay (Shai)] - ভাগ্যের মূর্তরূপ। সেয় একজনের ব্যক্তিগত ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং তাই মেসখেনেট এবং রেনেনুটেটের মতো দেবীদের সাথে সংযুক্ত ছিলেন। প্রাচীন গ্রীক সংস্কৃতির ‘ফেট’ বা ভাগ্যের মতোই, কেউই সেয়ের সিদ্ধান্তকে প্রতিহত করতে বা পরিবর্তন করতে পারত না। গবেষক উইলকিনসন ‘আমেনেমোপেটের নির্দেশনা’ নামে পরিচিত একটি লেখনী উদ্ধৃত করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে, ‘কেউ সেয়কে উপেক্ষা করতে পারে না’। এই বিবৃতিটি সেয়ের প্রধান বৈশিষ্টকে তুলে ধরে: অনিবার্যতা। তাকে মৃত্যু পরবর্তী জীবনে আত্মার হৃদয়ের ওজনের সময় উপস্থিত ধৈর্যের সাথে দাঁড়িয়ে থাকা একজন মানুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। টলেমাইক রাজবংশের সময় (৩২৩-৩০ খ্রিষ্টপূর্ব), যখন মিশরীয় দেবতাদের হেলেনীয় ভাবনায় জারিত করা হচ্ছে, তখন ইনি আগাথোডাইমন নামের সর্প দেবতা রূপে পরিচিত ছিলেন। যিনি ভবিষ্যত বলতে পারতেন।
শেড [Shed] - প্রতিরক্ষামূলক দেবতা, যিনি বন্য প্রাণী বা নশ্বর শত্রুদের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ক্ষতি হওয়া থেকে রক্ষা করেন। শিকারী এবং সৈন্যরা একে স্মরণ বা আহ্বান করতেন। ইনি ‘ উদ্ধার কর্তা’ এবং ‘দ্য এনচান্টার’ বা মন্ত্র প্রয়োগকারী নামে পরিচিত ছিলেন। বন্য প্রাণী এবং অস্ত্রের অধিপতি ছিলেন এবং সেজন্যই কেউ বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাকে স্মরণ বা আহ্বান করলে বন্য প্রাণী বা অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ করে তাকে বাঁচাতেন। শত্রুদের দ্বারা নিক্ষিপ্ত জাদু মন্ত্র এবং সম্ভবত ভূত বা দানবদের হাত থেকে সুরক্ষা লাভের জন্যও তাকে আহ্বান করা হত। তূণীরধারী জুলফি ব্যতীত চুল কামানো মাথাওয়ালা যুবক হিসাবে তাকে চিত্রিত করা হয়েছে। ইনি প্রায়শই খালি হাতে সাপ ধরে পিষে মারতেন। পরবর্তী সময়ে তার গুণাবলী হোরসের চরিত্রে আরোপিত হয়েছিল। যদিও মানুষ তার উপাসনা করা থামায়নি। তাবিজ রূপে তার চিহ্ন শরীরে ধারণ করত।
শেনতায়েত [Shentayet] – খুব বেশি কিছু জানা যায় না এমন এক প্রতিরক্ষামূলক দেবী। যার নামের অর্থ ‘বিধবা’। যিনি আইসিসের সেই দিকটির মূর্ত রূপ যিনি তার স্বামীকে হারিয়েছিলেন এবং তারপরে তাকে জীবিত করে তুলেছিলেন। এই রূপভেদটিকে আইসিস-শেনতায়েত হিসাবে উল্লেখ করা হয়। সম্ভবত বিধবাদের রক্ষাকারিণী হিসাবে আহ্বান জানানো হয়েছিল কিন্তু তার উল্লেখ বিরল। আইসিসকে এই একই ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। তার সাথে অনেক দেবীই এই কাজ করেছেন।
শেপেট [Shepet] - প্রতিরক্ষামূলক দেবী। রেরেট বা টাওয়েরেটের মতো জলহস্তীসমা দেবী, যার উপাসনা ডেনডেরাতে করা হত। আইকনোগ্রাফি বা যে রূপে তাকে চিত্রিত করা হয়েছে সেখানে ইনি বাকি দুই দেবীর মতই দেখতে শুধু মাথাটা কুমিরের মতো।
সেস্মেতেত [Shesmetet] - প্রতিরক্ষামূলক লিওনাইন বা সিংহসমা দেবী যিনি ‘লেডি অফ পান্ট’ নামে পরিচিত। সম্ভবত পান্টের সাথে বাণিজ্যের সময়ে মিশরে আগমন হয়েছিল এই গুরুত্বপূর্ণ দেবীর। তাকে সাধারণত বাস্টেট বা সেখমেটের একটি রূপভেদ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। তবে সম্ভবত ইনি এদের চেয়ে অনেক বেশি প্রাচীন দেবী ছিলেন যার বৈশিষ্ট্যগুলি পরবর্তী লিওনাইন দেবীদের দ্বারা আহরিত হয়। এই দেবীর নাম প্রথম রাজবংশের (আনুঃ ৩১৫০-২৮৯০ খ্রিস্টপূর্ব) সময়কালে উল্লেখ করা হয়েছে। সেস্মেতেত কোমরবন্ধনী, এক ধরণের পুঁতির বেল্ট, সেই সময়ের রাজারা পরতেন। তাকে সিংহের মাথাওয়ালা একজন নারী হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে।
সেজমু [Shezmu] – উত্তেজক পানীয় বা মদের দেবতা। পরে, সুগন্ধি এবং প্রাচুর্যর দেবতায় পরিণত হন। যিনি মাতাল হওয়ার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলিকে ব্যক্ত করেছেন। পিরামিড লেখনী ৪০৩-এ সেজমুকে দেখানো হয়েছে রাজাকে খুশি করার জন্য দেবতাদের হত্যা ও রান্না করছেন। মধ্য সাম্রাজ্যের সময়কালে (২০৪০-১৭৮২ খ্রিষ্টপূর্ব) মৃতদের আত্মাকে যন্ত্রণা দিতেও একে দেখা গেছে। ইনি ‘ধ্বংসের রক্তাক্ত রুপ প্রদর্শন করে অভিশাপিতদের চাবুক মারেন এবং তাদের হত্যা করেন, আঙ্গুরের মতো তাদের মাথা নিষ্পেষিত করেন।‘ (উইলকিনসন)। আবার অনেকেই উত্তেজক পানীয় সেবীদের প্রভু হিসেবে দেখিয়ে তার ভাবমূর্তি নরম সৌম্য ও শান্তিপূর্ণ দিকটাকে পেশ করেছেন। তার সাথে তেল এবং সুগন্ধির সম্পর্ক জুড়ে দিয়ে তাকে আরও নরম স্বভাবের দেবতা রূপে দেখানো হয়েছে।
শু [Shu] - বায়ুর আদিম দেবতা। যার নামের অর্থ ‘শূন্যতা’। ইনি আটুম (রা) এর সৃষ্টির শুরুতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং তার বোন টেফনাট (আদ্রতার দেবী) এর সাথে বিশ্ব তৈরি করতে তাকে পাঠানো হয়েছিল। এরা দু'জন অনেকদিন ফিরে না আসার কারণে আটুম কষ্ট পেতে শুরু করেন এবং তাদের সন্ধানে নিজের একটি চোখকে (রা এর চোখ) পাঠান। চোখটি তাদের সাথে ফিরে আসে, আটুম খুব খুশি হয়ে কেঁদে ফেলেন। সেই কান্নার জল থেকে মানুষের সৃষ্টি হয়েছিল। শু এবং টেফনাট এরপর সঙ্গমে লিপ্ত হন। জন্ম হয় গেব (পৃথিবী) এবং নাটের(আকাশ)। যাদেরকে আটুম একে অপরের থেকে দূরে ঠেলে দেন, মানুষের বসবাসের জন্য একটি জায়গা তৈরি করার জন্য। কুয়াশাকে “শুয়ের হ্রদ’ এবং মেঘগুলিকে ‘শুয়ের হাড়’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়। ইনি আলো এবং উজ্জ্বলতার সাথেও সংযুক্ত ছিলেন। এই সূত্রে ইনি থথ এবং খনসুর সাথেও সম্পর্কযুক্ত হয়ে যান। কারণ উভয়ের সাথে চাঁদের সম্পর্ক ছিল চাঁদের আলোর কারণে।
সিয়া [Sia] - উপলব্ধি এবং চিন্তাশীলতার মূর্ত রূপ যা হৃদয়কে প্রতিনিধিত্ব করে (আবেগ, চিন্তাভাবনা এবং চরিত্রের আসন বলা হয়)। সিয়ার সাথে কথ্য শব্দের কর্তৃত্বের মূর্তরূপ হু (জিহ্বাকে প্রতিনিধিত্ব করেন যিনি) এর একটি যৌথ সত্বা ছিল। হু এবং জাদু ও ওষুধের দেবতা হেকার সাথে একটি ত্রিত্ব শক্তি তৈরি করা হয়েছি। তবে তাকে মহাবিশ্বের আদি শক্তি যা জীবনকে শক্তিশালী করেছিল বলেও উল্লেখ করা হয়, যা মা’আতকে টিকিয়ে রেখেছিল। সিয়া বুদ্ধির প্রতিনিধি স্বরূপ। হু ছিলেন তাহ (বা আতুম) এর শব্দের প্রতীক। যা চিন্তাকে বাস্তবে নিয়ে আসে এবং হেকা ছিলেন অন্তর্নিহিত শক্তি যা এদের শক্তি দেয়। সিয়াকে তাহ (পরে, আটুম/রা)এর ডানদিকে প্যাপিরাস পুঁথি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা একজন পুরুষ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। ‘ভ্যালি অফ দ্য কিংস’-এ পাওয়া ছবিতে তাকে রা-এর সূর্য বজরায় থাকা নাবিকদের একজন সদস্য হিসেবে দেখা যায়।
আকাশিক ষাঁড় [Sky Bull] - দেবতা যিনি স্বর্গ এবং পরকালের রক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরকালের সাথে তার সংযোগ থাকার জন্য, তাকে ‘পশ্চিমের ষাঁড়’ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়। সাধারণভাবে তার সঙ্গে থাকা সাতটি গরুর স্বামী হিসাবেই তাকে চিহ্নিত করা হয়।
সোবেক [Sobek] - কুমিরের অবয়বধারী বা কুমিরের মাথাওয়ালা একজন মানুষরূপী এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষামূলক দেবতা। সোবেক মূলত ছিলেন জলের দেবতা, তবে ওষুধ এবং বিশেষত অস্ত্রোপচারের সাথেও তার সংযোগ ছিল। নামের অর্থ ‘কুমির’ এবং ইনি জলাভূমি সহ মিশরের যে কোনও আর্দ্র অঞ্চলের অধিপতি রূপে বিবেচিত হতেন। পিরামিড লেখনীতে তাকে নিথের পুত্র বলে দাবি করা হয়েছে এবং আদি সাম্রাজ্যর সময়কালে (আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিস্টপূর্বা) এর ব্যাপকভাবে উপাসনার সূচনা হয়। জলাভূমির দেবতা হিসাবে তিনি উর্বরতা এবং বংশবৃদ্ধির সাথেও যুক্ত ছিলেন। আবার কুমির দেবতা রূপে অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর সাথেও তার নাম জুড়ে ছিল। তার উপর নির্দেশ ছিল স্ত্রীদেরকে তাদের স্বামীদের থেকে বিচ্ছিন্ন করানোর। দিগন্ত এলাকায় অবস্থিত একটি পৌরাণিক পাহাড়ে সোবেক বাস করতেন। যেখান থেকে তিনি শাসনের কাজ চালাতেন। রাজসূচক কর্তৃত্ব তার ছিল কারণ তিনি নিজেই একটি এলাকার প্রভু ছিলেন। দিগন্ত এলাকায় সাথে তার এই সংযোগ তাকে রা-এর সাথে যুক্ত করে এবং রা-এর রূপভেদের দিকেও ইশারা করে। যা সোবেক-রা নামে পরিচিত। সোবেক প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে পরিচিত দেবতাদের একজন এবং তার সময়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তার পুরোহিতরা মন্দিরে জীবন্ত কুমির পুষতেন। যাদের সাথে সেই সময়ের অনেক মানুষের চেয়ে ভাল ব্যবহার করা হত। সবচেয়ে সেরা মাংস খাওয়ানো হত ওই প্রাণীদের। যখন এই কুমিরের মারা যেত তখন তাদের মমি বানিয়ে একজন মানুষের মতোই সমস্তরকম যত্ন সহকারে সমাধি দেওয়া হত। নীল নদের সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। এর জলকে সোবেকের ঘাম হিসাবে উল্লেখ করা হত।
সোকার (সেকের) [Sokar (Seker)] - মেমফিসের একজন প্রতিরক্ষামূলক ফ্যালকন বা বাজ দেবতা। মিশরের প্রাচীনতম দেবতাদের একজন এই সোকার মূলত একজন কৃষি দেবতা ছিলেন। তাকে উদ্দেশ করে পালিত উত্সবটি ছিল প্রাচীনতম পালিত উৎসবগুলির মধ্যে একটি। যা ওসাইরিসের খোইয়াক উত্সবের সাথে একীভূত হয়ে মিশরের সমগ্র ইতিহাসে পালিত হওয়ার নজির মেলে। ওসাইরিস ক্রমশ জনপ্রিয় হতে থাকার কারণে সোকার কৃষি ও বৃদ্ধির দেবতা থেকে কারিগরদের দেবতায় পরিণত হন। সাথেই মেমফিস নেক্রোপলিসের অভিভাবক হিসাবে বিবর্তিত হন। সোকারকে প্রায়শই বাজপাখির মাথা দ্বারা বেষ্টিত একটি অন্ত্যেষ্টির ঢিবি হিসাবে চিত্রিত করা হয়। একটি বাজপাখি হিসাবে বা বাজপাখির মাথাওয়ালা মানুষ হিসাবেও তার ছবি পাওয়া গেছে। মৃত্যু পরবর্তী পাতালজগতের সাথেও তার সম্পর্ক আছে। ওই স্থানের প্রবেশদ্বার দেখাশোনা করা এবং মৃত রাজার আত্মাকে স্বর্গে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পালন করতে হত তাকে। সময়ের সাথে সাথে, সোকার মিশে যান তাহ এবং আরও পরে ওসাইরিসের সাথে। অবশেষে মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্যের সময়কালে (২০৪০-১৭৮২ খ্রিষ্টপূর্ব) তাহ-সোকার-ওসাইরিস একত্রিত হয়ে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের দেখভালকারী এক সংকর দেবতায় পরিণত হন।
হোরাসের পুত্র [Sons of Horus] - হোরাসের চার পুত্র [ডুয়ামুটেফ, হাপি, ইমসেট এবং কেবেহসেনুয়েফ] বিষয় দেখুন।
সোপডু (সোপেড বা সোপেডু) [Sopdu (Soped or Sopedu)] - মিশরের পূর্ব সীমান্তের একজন প্রতিরক্ষামূলক দেবতা যিনি সীমান্ত এলাকায় ফাঁড়ি এবং সৈন্যদের রক্ষা করতেন। ডান ডানার উপর রাজকিয় চামর সহ একটি বাজপাখি রূপে বা দুটি পালক বিশিষ্ট মুকুট সহ দাড়িওয়ালা মানুষ হিসাবে এই দেবতাকে চিত্রিত করা হয়েছে। সোপডু তার সূক্ষ্মরূপ বা ঐশ্বরিক আকারে হোরাস এবং দেবতা রুপ বিবেচিত রাজাদের সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। উইলকিনসন লিখেছেন, ‘ওসাইরিস-ওরিয়নের রূপে থাকা, মৃত রাজাকে, সোথিস নক্ষত্র রূপিণী আইসিসকে গর্ভবতী করে হোরাস-সোপডুকে নির্মাণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল’। পার্থিব জগতের রাজ্যে, তিনি নিশ্চিত করেছিলেন যে, যথাযথ সম্পদ পূর্ব সীমান্তের সেনাছাউনিগুলিতে যেন পৌঁছে যায়। যার সূত্রে রাজা সেই অঞ্চলের স্থানীয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হন।
সোথিস [Sothis] - সিরিয়াস নক্ষত্র (‘ডগ স্টার’) এর মূর্ত রূপ। যার আবির্ভাব নীল নদের বার্ষিক প্লাবনের সূচনা করত। সিরিয়াস-এর সাথে সম্পর্কযুক্ত এই দেবী প্রাক সাম্রাজ্য যুগে (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) ইনি একটি গো-দেবী হিসেবে পূজিত হতেন। ওরিয়ন নক্ষত্রর মূর্তরূপ সাহের সহধর্মিণী। যাদের সাথে ওসাইরিস এবং আইসিসের সম্পর্ক ছিল। এই ভূমিকায়, ইনি সোপডুর মা, ফলে তার সাথে প্রতিরক্ষামূলক প্রভাব বিস্তারের একটা যোগসূত্র ছিল। ইনি স্যাটিসের সাথেও যুক্ত ছিলেন, যিনি খনুমের স্ত্রী হিসাবে নীল নদের প্লাবনের সাথে যুক্ত ছিলেন। সোথিসের প্রারম্ভিক চিত্রগুলিতে তাকে তার শিংগুলিতে জড়িয়ে থাকা উদ্ভিদ সহ একটি গরু হিসাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তী চিত্রগুলিতে তাকে উচ্চ মিশরের সাদা মুকুট পরা একজন মাথায় শিংওয়ালা নারী বা পাঁচ তারা সহ পালকের মুকুটধারিণী হিসাবেও পাওয়া যায়। সময়ের সাথে সাথে আইসিসের সাথে তাকে এক করে দেখা হতে থাকে এবং অবশেষে সেই দেবীতেই সম্পূর্ণরূপে লীন হয়ে যান। টলেমাইক রাজবংশের (৩২৩-৩০ খ্রিস্টপূর্ব) ‘দ্য ল্যামেন্টেশনস অফ আইসিস অ্যান্ড নেফথিসের’ লেখনীর একটি অনুলিপিতে আইসিস নিজেকে সোথিস হিসাবে উল্লেখ করেছেন। যা প্রমাণ দেয় কীভাবে সেই সময়ের মধ্যে এই আত্তীকরণ প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল।
নেখেন এবং পে-এর আত্মা [Souls of Nekhen and Pe] - উচ্চ মিশরের নেখেন শহরের (হিয়ারকোনোপোলিস নামে পরিচিত) এবং নিম্ন মিশরের পে শহরের (বুটো নামেও পরিচিত) দুই পূর্বপুরুষের আত্মা, যারা প্রতিরক্ষামূলক আত্মা হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলেন। এই আত্মারা প্রতীকীভাবে উচ্চ এবং নিম্ন মিশরকে একত্রিত করেছিলেন এবং জীবনে তথাপি মৃত্যুর পরেও রাজার সেবা করে গিয়েছিলেন একইভাবে। যখন রাজা বেঁচে ছিলেন তখন তাকে হোরাস রূপে এই আত্মারা উত্সাহ প্রদান করেছিলেন। রাজা মারা যাওয়ার পর ওসাইরিসের সাথে যুক্ত হয়ে গেলে এই আত্মারাই শোকপ্রকাশ ও যথোপযুক্ত সম্মান প্রদর্শন করেছিল। পে-এর আত্মাকে বাজপাখির মাথাওয়ালা এবং নেখেনের আত্মাকে শেয়াল-মাথা দুজন পুরুষ রূপে দেখানো হয়েছে। উভয়কেই রাজাদের সমাধির শিলালিপিতে দেখতে পাওয়া যা। মৃত রাজার পরবর্তী জীবনে আগমনকে সম্মান জানাতে নতজানু হয়ে বসে আছেন।
নক্ষত্রের দেব-দেবী [Star Deities] - সেই সমস্ত দেবতা এবং দেবী যারা রাতের আকাশের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। মধ্যকালিন সাম্রজ্যের সময়কালে (২০৪০-১৭৮২ খ্রিস্টপূর্ব) মিশরীয়রা পাঁচটি গ্রহকে চিহ্নিত করেছিল। যেগুলিকে তারা ‘এরা বিশ্রাম কী তা জানে না’ বলে উল্লেখ করেছিল। এদেরকে তারা দেবতা রূপে চিহ্নিত করে। বুধ 'সেবেগু' (সেট দেবতার একটি রূপ); শুক্র (‘যিনি সব পার করে যান’ এবং ‘প্রভাতের দেবতা ’); মঙ্গল (‘দিগন্তের হোরাস’ এবং ‘লাল হোরাস’) বৃহস্পতি (‘দুই ভুমিকে নিয়ন্ত্রিত রাখা হোরাস’) এবং শনি (‘স্বর্গের ষাঁড়রূপী হোরাস’)। এছাড়াও, সিরিয়াস নক্ষত্রকে সোথিস এবং পরে আইসিস, ওরিয়ন নক্ষত্রকে ‘দেবতাদের পিতা’ সাহ রূপে মেনে চলত মিশরের মানুষ। সিরিয়াসের আবির্ভাব নীল নদের প্লাবন, উর্বরতার প্রতিশ্রুতি, এবং অস্তিত্বের চক্রাকার প্রকৃতির প্রতিনিধিত্ব করে এবং সেই জন্যই মৃত ও পুনরুজ্জীবিত দেবতা ওসাইরিস এবং আইসিস, যিনি তাকে পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন, তার সাথে যুক্ত হয়ে যায়। তারাগুলিকে সেও সময়ে ‘ওসাইরিসের অনুগামী’ বলা হত। যারা ঐশ্বরিক নকশা অনুসারে রাতের আকাশ জুড়ে যাত্রা করে। সাহ এবং সোথিস স্বর্গে ঐশ্বরিক দম্পতি ওসাইরিস এবং আইসিসের প্রতিভূস্বরূপ। দেবতা সোপডু, (সোথিসের পুত্র), হোরাসের সূক্ষ্ম ঐশ্বরিক রূপের প্রতিনিধিত্ব করতেন। এইভাবে রাতের আকাশের মাধ্যমে মিশরীয় সংস্কৃতির সবচেয়ে অর্থবহ গল্পগুলিকে মানুষের সামনে পেশ করা হয়েছিল। মিশরীয় জনগণ তারাদের দিকে তাকিয়ে দেবতাদের উপস্থিতি অনুভব করে অনন্তকালের আশ্বাস লাভ করত।
সুতেখ [Sutekh] - দেবতা সেটের (সেথ) সেমিটিক নাম। যা হিক্সস নামে পরিচিত জনগোষ্ঠীর লোকেরা দ্বিতীয় মধ্যবর্তী সাম্রাজ্যের সময়কালে (আনুঃ ১৭৮২-১৫৭০ খ্রিষ্টপূর্ব) চালু করেছিল। হিক্সসরা তাদের দেবতা বালের যুদ্ধ বিষয়ক দিকের সূত্রে সেটকে চিহ্নিত করেছিল। দ্বিতীয় রামেসিসের (১২৭৯-১২১৩ খ্রিস্টপূর্ব) শাসনকালে সেটকে সুতেখ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছিল এবং যুদ্ধের অগ্রদূর হিসাবে আহ্বান জানানো হত।
T
তা-বিটজেট [Ta-Bitjet] - প্রতিরক্ষামূলক দেবী। বিশেষ করে যেকোনোরকম বিষাক্ত কামড় এবং হুলের দংশন থেকে রক্ষা করার দেবী। প্রায়শই এই দেবীকে নিরাময় মন্ত্রে আহ্বান করা হত। দেবী সার্কেটের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। পরে আইসিস-এর সাহে মিশে যান।
তাসেনেটনোফ্রেট [Tasenetnofret] - কম ওম্বোর প্রতিরক্ষামূলক দেবী। যার নামের অর্থ ‘ভালো বোন’ বা ‘সুন্দর বোন।। ইনি ছিলেন হোরাসের সহধর্মিণী এবং প্যানেবতয়ের মাতা দেবী হাথোরের স্থানীয় রূপ।
তাটেনেন [Tatenen] - পৃথিবী দেবতা, যিনি সৃষ্টির সময় আদিম ঢিপিকে মূর্ত করেছিলেন এবং মিশরের ভূমির প্রতীক। সম্ভবত একই দেবতা যাকে প্রাচীন রাজ্যের সময়কালে ( আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিস্টপূর্ব) খেন্টি-জেনেনেট হিসাবে উল্লেখ করা হত। মধ্যকালীন সাম্রাজ্যের (২০৪০-১৭৮২ খ্রিস্টপূর্ব) সময়কালে মেমফিসে এর উপাসনা করা হত। প্রাচীন মিশরের বাকি সময়কালে প্রাথমিকভাবে এই অঞ্চলেই তার উপাসনা বর্তমান বা অব্যাহত ছিল। আদিম ঢিবির সাথে তার সম্পর্ক তাকে তাহ-এর সাথে এবং তাহ-এর মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা দেবতা/সূর্য দেবতা আটুম এবং রা এর সাথে যুক্ত করে। তাটেনেন সম্ভবত ছিলেন একজন উভকামী দেবতা, কারণ একটি লেখায় তাকে ‘সমস্ত দেবতার মা’ রূপে উল্লেখ করা হয়েছে।
তাওয়েরেত (তাউরেত) Taweret (Tauret) - জলহস্তী আকারের প্রতিরক্ষামূলক দেবী। প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে বিখ্যাত জলহস্তী দেবী, যার সাথে আইসিস এবং হাথোর উভয়ের সম্পর্ক যুক্ত ছিল। তাওয়েরেত প্রসব এবং উর্বরতার একজন দেবী যিনি মিশরের গোটা ইতিহাস জুড়ে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। গর্ভাবস্থায় এবং জন্মের সময় শিশুদের সুরক্ষায় সাহায্য করার জন্য নিয়মিত আহ্বান জানানো হত। প্রাচীন মিশরীয়রা নারীরা জলহস্তীকে তার সন্তানদের জন্য অত্যন্ত সুরক্ষামূলক এক প্রানী হিসাবে বিবেচনা করতেন। এই সূত্রেই দেবীর এই রূপ নির্মাণ সেটা সহজেই অনুমেয়। পুরুষ জলহস্তী খুবই আক্রমনাত্মক প্রাণী এবং মিশরের সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণীদের মধ্যে একটি হিসাবে একে বিবেচনা করা হত। যে কারণে দেবতা সেটের সাথে পুরুষ জলহস্তীর অবস্থান দেখানো হত। যার ফলে এই দুটি দেবদেবীর কাজের দিক থেকে মিল না থাকলেও সেটের স্ত্রী হিসাবে তাওয়ারেটের ছবি পাওয়া যায়। তাওয়ারেতের সাথে হাথোরের যোগসুত্র ছিল ঘনিষ্ঠভাবে। ‘হোরাসের অনুসারী’ও বলা হয়। ফলে এরা সেট থেকে যে দূরেই অবস্থান করতেন সেটা প্রমাণ করে। সন্তান জন্মদান, যৌনতা, রসিকতা এবং যুদ্ধের বামন দেবতা বেসের স্ত্রী হিসাবে চিহ্নিত। বেসের মতো, তাওয়ারেটের ছবি ঘরোয়া জিনিসপত্র যেমন আসবাবপত্র, প্রসাধনী দ্রব্যের বাক্স, পাত্র, চামচ এবং বাড়ির পক্ষে শুভ সবকিছুতেই অঙ্কন করা হত।
তায়েত (টেইট) [Tayet (Tait)] - বয়নশিল্পের দেবী। যিনি রাজার জন্য বস্ত্র সরবরাহ করতেন। ছিলেন। প্রাচীন সাম্রাজ্য (আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিস্টপূর্ব) সময়কাল থেকেই থেকে তার উপাসনা প্রচলিত ছিল। যেখানে তাকে রাজার মস্তক রক্ষা করা, মৃত্যুর পরে তাকে রক্ষা করা, তার হাড়গুলি সংগ্রহ করা এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনে অন্যান্য দেবতারা তাকে স্বাগত জানাবে এবিষয়ে আশ্বাস প্রদান করার দায়িত্ব পালন করতে হত। পরে ইনি পচন থেকে রক্ষা করার বিষয়ের সাথে যুক্ত হয়ে যান। তাকে বলা হয়, সুগন্ধি কাপড় বুনতে যা দিয়ে বানান তাঁবু এই কাজে বিসেষ সাহায্য করবে। পরবর্তীতে, মমিকে মোড়ানোর জন্য ব্যবহৃত কাপড়ের টুকরো বয়নের সাথেই তার সম্পর্ক বিনির্মাণ করা হয়। ‘তায়েতের হাতে বানানো মোড়কের কাপড়’ নামে পরিচিত ছিল। এটাই আবার তাকে নেফথিসের সাথে সংযুক্ত করেছিল।
টেফনাট [Tefnut] - আর্দ্রতার দেবী। শু এর বোন। বিশ্ব সৃষ্টিতে আটুম (রা) এর কন্যা। শু এবং টেফনাট ছিলেন প্রথম দুই দেবতা যাদের আটুম নিজেরর ছায়ার সাথে মিলনের মাধ্যমে বা থুতু দিয়ে তৈরি করেছিলেন। আর এইচ উইলকিনসন উল্লেখ করেছেন যে, তার নাম থুতু ফেলার শব্দকে প্রতিনিধিত্ব করে এবং তাকে প্রায়ই পরবর্তী সময়কালীন লেখনীতে ‘এক জোড়া ঠোঁট, যা থুতু ফেলছে’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি নিচের জগত বা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দেবী। ঠিক যেমন শু পৃথিবীর উপরের বায়ুমণ্ডলের দেবতা। টেফনাট হলেন গেব (পৃথিবী) এবং নাট (আকাশ) এর মা। যাতে মানুষের বসবাসের জন্য কোনো স্থান নির্দিষ্ট হয় তার জন্য যারা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এঁকে প্রায়শই সিংহের মাথা সহ উপবিষ্ট এক নারী বা একটি সাপ হিসাবে চিত্রিত করা হয়।
টেনেনিট (টেনেনেট বা টিয়েনেনেট) [Tenenit (Tenenet or Tjenenet)] - বিয়ার, মদ্যপান এবং প্রসবের দেবী। নামটা এসেছে ‘টেনেমু’ থেকে, যার অর্থ ‘বিয়ার’ বা উত্তেজক পানীয়। দেবতা মন্টুর সহধর্মিণী এবং রাজকীয় জন্মের দেবী হিসাবে মেসখেনেটের সাথে সম্পর্কযুক্ত। মদ জাতীয় পানীয় প্রস্তুতকারকদের পৃষ্ঠপোষক দেবী।
টেট্রাডস [Tetrads] - কম্পাসের চারটি মূল বিন্দু ছাড়াও সঙ্গতিপূর্ণ সম্পূর্ণতার প্রতিনিধিত্বকারী এবং হোরাসের চার পুত্র দ্বারা এদের সর্বোত্তমভাবে উপস্থাপন করা হয়। ভারসাম্য প্রাচীন মিশরীয়দের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল। সংখ্যা হিসাবে দুই, চার এবং আট দেবতাদের প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার হত। (একই ভাবে তিন, ছয় এবং নয়কেও গুরুত্ব দেওয়া হত)। প্রতিটি পুরুষ দেবতার একটি নারী প্রতিরূপ বা একটি নারী সত্তা ছিল। আইসিস, নিথ, নেফথিস এবং সার্কেট নামের চার দেবী হোরাসের চার পুত্রের[ডুয়ামুটেফ, হাপি, ইমসেট এবং কেবেহসেনুয়েফ] উপর নজরদারি করতেন। আবার ওগডোড ছিল সৃজনশীল পদার্থের আটটি দেবতার এক গোষ্ঠী।
থথ [Thoth] - লেখনী এবং জ্ঞান, সত্য এবং অখণ্ডতার দেবতা। মিশরীয় সামগ্রিক দেব-দেবী ভাবনায় বা প্যান্থিয়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দেবতাদের মধ্যে একজন। প্রাক সাম্রাজ্য যুগ (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্বা) থেকে মিশর শাসনকারী শেষ টলেমাইক রাজবংশ (৩২৩-৩০ খ্রিস্টপূর্ব) পর্যন্ত এর উপাসনা পদ্ধতি চালু ছিল। উৎসে সম্ভবত একজন চন্দ্র দেবতা ছিলেন, যিনি আতুম (রা) এর পুত্র। কিন্তু পরবর্তী গ্রন্থগুলি তাকে হোরাসের পুত্র হিসাবে উপস্থাপন করে। কিছু গ্রন্থে থথকে একটি বেবুন হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একজন ব্যক্তিমানুষ হিসাবে দেখানো হয়েছে যার মাথা আইবিসের মতো, হাতে লেখার সরঞ্জাম। ইনি লেখার উদ্ভাবনের কৃতিত্ব এবং দেবতাদের লিখিত নথির রক্ষক ছিলেন। ‘সময়ের প্রভু’ এবং ‘বছরের হিসাবরক্ষক’ হিসাবেও পরিচিত ছিলেন। কারণ তিনি সময়কে চিহ্নিত করেছিলেন এবং তার শব্দ বিষয়ক ঐশ্বরিক জ্ঞানের শক্তিশালী জাদু দ্বারা, রাজাকে দীর্ঘ রাজত্ব প্রদান করতেন। যাতে পৃথিবীতে শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়। ইনি গ্রন্থাগার এবং লেখকদের পৃষ্ঠপোষক দেবতা ছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বলা প্রতিটি গল্পে, থথ হলেন ঐশ্বরিক বন্ধু এবং মানবতার কল্যাণকারী। যিনি লিখিত শব্দ উপহার দিয়ে মানুষকে উপলব্ধি করার শক্তি দিয়েছিলেন। একটি গল্পে ইনি প্রথম পাঁচ দেবতাকে জন্ম দেওয়ার জন্য নাটের প্রয়োজনীয় পাঁচ দিন জুয়া খেলে জিতে এনেছিলেন। আর একটি গল্পে এঁকেই দেবতাদের মধ্যস্থতাকারী এবং বার্তা প্রদানকারী হিসাবে দেখতে পাওয়া যায়। মৃত্যু পরবর্তী জীবনে ইনি ওসাইরিসের সাথে থাকেন এবং ‘ট্রুথ অফ হল’-এ হৃদয়ের ওজন মাপার আচার অনুষ্ঠানে কি ঘটছে তা নথিভুক্ত করে রাখেন। তাঁর সহধর্মিণী ছিলেন শেসাত, কখনও তাঁর কন্যা। যিনি তাঁর নারী প্রতিভূ এবং গ্রন্থাগার ও বইয়ের পৃষ্ঠপোষক দেবী।
তিয়েনেনিয়েট [Tjenenyet] - ১২ তম রাজবংশের সময়কালের (১৯৯১-১৮০২ খ্রিস্টপূর্ব) একজন প্রতিরক্ষামূলক দেবী, যাকে সম্ভবত আরও আগে থেকে উপাসনা করা হত। ইনি দেবতা মন্টুর সহধর্মিণী। প্রাথমিকভাবে থিবসের কাছে হারমনথিসে (আর্মান্ত) এর পূজা করা হতো।
বৃক্ষদেবী [Tree Goddesses] - বেশ কিছু সুপরিচিত মিশরীয় দেবী গাছের সাথে যুক্ত ছিলেন, বিশেষ করে আইসিস, হাথোর এবং নাট। পুরুষ দেবতারা কখনও কখনও কোনও একটি নির্দিষ্ট গাছের সাথে যুক্ত ছিলেন। কিন্তু সেসবই শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কিছু পৌরাণিক কাহিনী বা চিত্রকল্পে পাওয়া যায়। হাথোর জনপ্রিয় ছিলেন সিকামোর গাছের সূত্রে। তাকে ‘লেডি অফ দ্য সিকামোর’ নামে ডাকা হত। আইসিসও এই গাছের সাথে যুক্ত ছিলেন। কাঠের পাত্র বা বাক্সে মৃতদেহ দাফন করার প্রথা মাতৃ দেবীর গর্ভে মৃত ব্যক্তির প্রত্যাবর্তন বলে মনে করা হয়।
ট্রায়াডস [Triads] - তিনটি দেব-দেবীর গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী বা সমন্বয়। সাধারণত একজন পিতা-দেবতা, মাতা-দেবতা এবং শিশু-দেবতা থাকত। দুটি সর্বাধিক পরিচিত এরকম সমন্বয় হলো, আমুন, মাত এবং খোন্স, যা পরিচিত থেবান ট্রায়াড নামে এবং ওসাইরিস, আইসিস এবং হোরাসের অ্যাবিডোস ট্রায়াড। অন্যান্য ট্রায়াড বা ত্রিত্বর উদাহরণ রয়েছে, তবে, সেগুলো এই নিয়ম অনুসরণ করেনি। যেমন আমুন-রা- তাহ ট্রায়াড যেখানে তিনটি দেবতাই একই স্বর্গীয় শক্তির (সূর্য) প্রতিনিধিত্ব করে। মৃত্যু পরবর্তীকালের বর্ণনাতেও এই ত্রিত্ব দেখা যায়। যেখানে ভেড়া, সিংহ এবং শেয়াল-মাথার দেবতাদের একত্রিত করা হয়েছে।
টুটু [Tutu] - প্রতিরক্ষামূলক দেবতা, যাকে মিশরের ইতিহাসের শেষভাগে উপাসনা করা হত। ‘যিনি শত্রুদের দূরে রাখেন’ নামে পরিচিত। দানব বা রাক্ষস এবং কালো জাদু থেকে ইনি রক্ষা করতেন। মানুষের মাথাওয়ালা বড় ডানা এবং সাপের লেজযুক্ত এক গতিমান সিংহ হিসাবে তাকে চিত্রিত করা হয়েছিল।
U
উয়াত-উর [Uat-Ur] - ভূমধ্যসাগরের মূর্ত রূপ। ওয়াজ-উয়ের পড়ে দেখুন।
উইয়াত (ওয়াদজেট/ওয়াদিয়েত বা উটো) [Uajyt (Wadjet or Uto)] - নেখবেতের সাথে সম্পর্ক যুক্ত, নিম্ন মিশরের প্রতিরক্ষামূলক দেবী। তাকে নারীর মাথা সহ সাপ রূপে চিত্রিত করা হয়েছে। নিম্ন মিশরের পরবর্তী চিত্রগুলিতে তিনি নেখবেতের বোন ওয়াদজেটের একটি রূপভেদ।
উনাট (উইনেট বা উইনাট) [Unut (Wenet or Wenut)]- হারমোপোলিসে পূজিত এক প্রতিরক্ষামূলক দেবী। ‘দ্য সুইফট ওয়ান’ নামে পরিচিত। তাকে খরগোশের মাথাওয়ালা একজন নারী বা সাপ হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছিল এবং প্রায়শই তাকে ‘খরগোশ দেবী’ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইনি খরগোশের মাথাওয়ালা একজন মানুষ হিসাবে চিত্রিত উইনেনু দেবতার সাথে সম্পর্কযুক্ত ছিলেন। যিনি আসলে ওসাইরিসে আবার কখনও কখনও রা-এর একটি রূপভেদ হিসাবে পরিচিত ছিলেন। প্রাথমিকভাবে তাবিজে থাকা ছবি থেকে এই দেবীর কথা জানা যায়।
W
ওয়াদজেট/ওয়াদিয়েত [Wadjet] - নিম্ন মিশরের পৃষ্ঠপোষক তথাপি এক মহান প্রতিরক্ষামূলক দেবী। মিশরীয় প্যান্থিয়নের প্রাচীনতম দেবতাদের মধ্যে একজন। প্রতিপালক কোবরা সাপের প্রতিভূ। যা পরে রাজার চিহ্ন (ইউরায়াস)তে পরিণত হয়। এই দেবীকে তার আক্রমনাত্মক রূপ ‘উয়াজিত’ হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে। যা তার বোন নেখবেতের শক্তির ভারসাম্যরক্ষাকারী রূপের প্রকাশ। প্রাক সাম্রাজ্য যুগে (আনুঃ ৬০০০-৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) ওয়াদজেটকে একজন গুরুত্বপূর্ণ দেবী হিসাবে উপাসনা করা হত এবং প্রারম্ভিক সাম্রাজ্য যুগে (আনুঃ ৩১৫০-২৬১৩ খ্রিস্টপূর্ব) নিম্ন মিশরের সর্বোচ্চ দেবতাতে পরিণত হন। উচ্চ মিশরের প্রতীক নেখবেটের সাথে প্রায়শই তার নাম একসাথে উচ্চারিত হত। রা-এর কন্যা এবং রা-এর চোখ বিষয়ক গল্পে উল্লেখিত দেবীদের মধ্যে একজন। সৃষ্টির ভোরে যখন শু এবং টেফনাট পৃথিবী তৈরি করতে গিয়ে আর ফিরে আসছিল না, তখন এই দেবীকে রা তার চোখ হিসাবে ওদেরকে খুঁজে বের করার জন্য প্রেরণ করেছিলেন। ইনিই মিশরে প্রথম প্যাপিরাস গাছ লাগিয়েছিলেন। নীল নদের ব-দ্বীপের জলাভূমিতে প্যাপিরাস ক্ষেত্রর নির্মাণ করেন। যে স্থানে সেটের নজর থেকে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় হোরাস বড় করে তুলতে আইসিসকে সাহায্য করেছিলেন। তার একটি উপাধি ‘ওয়েরেট-হেকাউ’, যার অর্থ ‘জাদুর সেরা প্রয়োগকারিণী’। এই দেবীকে নিয়মিতভাবে দানব, দুর্ভাগ্য বা ভূতের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করার জন্য আহ্বান জানানো হত।
ওয়াজ-উয়ের (উয়াত-উর) [Wadj-Wer (Uat-Ur)] - ভূমধ্যসাগরের মূর্ত দৈব রূপ। যার নামের অর্থ ‘মহান সবুজ’। সাম্প্রতিক গবেষণা এই দেবতার ঐতিহ্যগত পুরাতন দৃষ্টিভঙ্গিকে পরিবর্তন করেছে। যার সূত্র্রে ইনি এখন ভূমধ্যসাগরের নিকটবর্তী ব-দ্বীপ অঞ্চলের হ্রদ, জলাভূমি এবং উপহ্রদের দিব্য রূপ বলে মনে করা হচ্ছে। উইলকিনসন শিলালিপির লেখনী উল্লেখ করেছেন, যেখানে পায়ে হেঁটে ‘মহা সবুজ অতিক্রম করা’র উল্লেখ মিলছে। যা সমুদ্রের পরিবর্তে ব-দ্বীপ অঞ্চলের মধ্য দিয়ে একটি স্থলভূমিকেই ইঙ্গিত করে। প্রাচীন সাম্রাজ্যর সময়কাল (আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিস্টপূর্ব) থেকে শুরু করে প্রাচীন মিশরের বাকি সময়টাতেও তার উপাসনা করা হয়েছিল। বিশেষ করে প্রতিরক্ষামূলক তাবিজ এবং সমাধির শিলালিপিতে তার বিষয়ে উল্লেখের মাধ্যমে।
ওয়াসেট (ওসরেট) [Waset (Wosret)] - থিবস নগরের একজন প্রতিরক্ষামূলক দেবী। যার নামের অর্থ ‘শক্তিশালী নারী’। ইনি ছিলেন নগরের মূর্ত রূপ যা 'ওয়াসেট' নামেও পরিচিত ছিল। উৎস অনুসারে এই দেবী হাথোরের একটি রূপভেদ ছিলেন। কিন্তু মধ্যকালীন সাম্রাজ্যের সময় (আনুঃ ২০৪০-১৭৮২ খ্রিস্টপূর্ব) ওয়াসেট তার নিজস্ব স্বতন্ত্র চরিত্র এবং রূপ নিয়ে আবির্ভূত হন। তাকে ফিতা দ্বারা সজ্জিত, রাজদণ্ড এবং ‘আঁখ’ ধারণ করা একজন নারী হিসাবে দেখানো হয়েছে। তবে থিবসের সামরিক শক্তির প্রতিনিধিত্বকারিণী রূপে তীর ধনুক এবং একটি কুঠার সহও ওয়াসেটের রূপ চিত্রিত হয়েছে।
ওয়েনেগ [Weneg] - সুরক্ষাপ্রদানকারী দেবতা। যার প্রথম উল্লেখ মেলে প্রাচীন সাম্রাজ্যর সময়কালে ( আনুঃ ২৬১৩-২১৮১ খ্রিস্টপূর্ব)। যিনি আকাশকে ধারণ করে রেখেছিলেন এবং স্বর্গ ও পৃথিবীর মধ্যে বিশেষ নীতি শৃঙ্খলা বজায় রেখেছিলেন। মা’আত ধারণা এবং সম্প্রীতির প্রতীক মা’আত দেবীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্ক ছিল তার। এই সূত্রে ইনি দেবতাদের মধ্যে বিবাদে ন্যায়সঙ্গত মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করতেন।
ওয়েনেনু [Wenenu] - একজন সুরক্ষাপ্রদানকারী দেবতা। ওসাইরিসের রূপভেদ, আবার কখনও কখনও রা_এর। উনাটের স্বামী। একে খরগোশের মাথাওয়ালা মানুষ হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে।
ওয়েপসেট [Wepset] - সুরক্ষাপ্রদানকারিণী দেবী। যার নামের অর্থ ‘যিনি নিজে জ্বলেন’। যিনি ওসাইরিসের শত্রুদের ধ্বংস করেন। তাকে সাধারণত একটি সাপ হিসাবে উপস্থাপিত করা হয়। যদিও পরে শিং সহ ইউরায়াস এবং মাথার উপরে সূর্যের চাকতি পরিহিত নারী হিসাবে তাকে চিত্রিত করা হয়েছে। ইনি রা-এর চোখ সম্পর্কিত গল্পগুলিতে, যেখানে রা-এর চোখ দেবতার থেকে বিদায় নেয় এবং ফিরে আসে বা দেবতা নিজেই ফিরে আসেন রূপান্তর সাথে নিয়ে, দূরবর্তী দেবী মোটিফের একটি মূর্তরূপ।।
ওয়েপওয়াওয়েত (উইপিউ বা উইপুয়াউত) [Wepwawet (Wepiu বা Wepuaut)] - মিশরের সবচেয়ে প্রাচীন দেবতাদের মধ্যে একজন এবং শেয়াল দেবতার প্রাচীনতম চিত্রণ। আনুবিসেরও আগের দেবতা, যার সাথে একে এক ভেবে প্রায়শই বিভ্রান্ত হতে হয়। নামের অর্থ ‘নতুন পথের দ্বার উন্মোচনকারী’। এই ভাবনাকে যুদ্ধে রাজার জয়ের পথ খোলা, পরকালের পথ খোলা এবং জন্মের সময় জগতে আগমনের পথ খোলা হিসাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাকে নারমার প্যালেটে (আনুঃ ৩১৫০ খ্রিস্টপূর্ব) চিত্রিত করা হয়েছে এবং ওয়াদজেটের সাথে সম্পর্ক যুক্ত। পরবর্তী সময়ে হোরাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মিশে যান। ওয়েপওয়াওয়েত-রা হিসাবে, সূর্য দেবতা রা এর সাথেও তার সম্পর্ক ছিল। এই দেবতাকে একটি শিয়াল হিসাবে চিত্রিত করা হয়েছে, কখনও কখনও শরীরে জড়ানো থাকে স্কার্ফ এবং সাথে থাকে একটি বাজপাখি।
ওয়েরেথেকাউ (ওয়েরেট-হেকাউ) [Werethekau (Weret-Hekau)] - একজন গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষাপ্রদানকারী দেবী। অথবা, প্রায়শই, আইসিসের মতো অন্যান্য নারী দেবতার ক্ষেত্রে যেমন প্রয়োগ করা হত সেরকম উপাধির একটি। অর্থ ‘মহান জাদু প্রয়োগকারিণী’। এর সাথে ইউরায়াস এবং নিম্ন মিশরের মুকুটের সম্পর্ক ছিল। ওয়াদজেট দেবী ওয়েরেট-হেকাউ নামে পরিচিত, যা আইসিসেরও উপাধি। তবে এই নামটি প্রতিপালনকারী এক সাপ হিসাবে চিত্রিত সুরক্ষার একটি নির্দিষ্ট দেবীকে ইঙ্গিত করেছে বলেই মনে হয়। অবশ্য এটি ওয়াদজেটের আক্রমণাত্মক রূপভেদও হতে পারে।
Y
ইয়াহ [Yah] – ইয়াহ বিষয়ে দেখুন।
ইয়াম [Yam] – ফিনিশিয়ান সমুদ্র দেবতা। যিনি বিশ্বের নিয়ন্ত্রণ দখল করার জন্য দেবতা বালের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। বাণিজ্যের সুত্রে মিশরীয় দেব গোষ্ঠীতে তার আগমন হয়। সেটের সাথে তার যুদ্ধের গল্পের মাধ্যমে মিশরীয় পুরাণে জায়গা করে নেন। উত্তাল সমুদ্র এবং চুড়ান্ত ভয়াবহতার মূর্ত রূপ। তাঁর জন্য কখনও কোনও মন্দির নির্মাণ করা হয়নি। তবে কিছু পাণ্ডুলিপিতে তাঁর উল্লেখ রয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি সেই সব নাবিকদের জন্য উদ্বিগ্ন বোধ করতেন, যারা সুরক্ষার জন্য তাঁর ছবি ওয়ালা তাবিজ পরে থাকত।
Z
জেনেনেট [Zenenet] - থিবসের কাছে হারমনথিস (আধুনিক আরমান্ট) নগরে আইসিসের প্রচলিত আরেকটি নাম।